পাতা:সাহিত্য-মীমাংসা - বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য্য.pdf/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাব্য ও অলঙ্কার > 0 (t চিন্তাধারার কোনও আস্তর সম্বন্ধ থাকিতে পারে না । সেইজন্ত, আনন্দবর্ধনাচার্ষ উহাদিগকে বহিরঙ্গ বলিয়া নির্দেশ করিয়াছেন । এই স্থলে উল্লেখযোগ্য যে, সংস্কৃত আলঙ্কারিকগণ অলঙ্কার্য ও অলঙ্কারের মধ্যে অন্তরঙ্গতার তারতম্য লক্ষ্য করিয়া লৌলিক অলঙ্কারসমূহের ত্ৰিবিধ শ্রেণীবিভাগ করিয়া গিয়াছেন । ধারাধিপতি ভোজদেব তাহার 'শৃঙ্গারপ্রকাশ’ শীর্ষক আলঙ্কারিক নিবন্ধে বলিয়াছেন : “অলঙ্কারসমূহ ত্ৰিবিধ—বহিরঙ্গ, অস্থ রঙ্গ ও মিশ্র । বহিরঙ্গের উদাহরণ যেমন বস্ত্র, মাল্য, ( কটক, কেয়ুর প্রভৃতি ) বিভূষণ । অন্তরঙ্গ যেমন, দন্তপরিকর্ম, নখচ্ছেদ এবং কেশবিন্যাস প্রভৃতি । মিশ্র যেমন, স্বান, ধূপ এবং ( চন্দন, কুকুম প্রভৃতি ) বিলেপন।” সৌন্দর্যসম্বন্ধে র্যাহার স্বৰ্ম্মবোধ আছে, তিনিই উপরিউক্ত শ্রেণীবিভাগের যৌক্তিকতা স্বীকার করিবেন । বস্ত্র মাল্য কুণ্ডল অপেক্ষা স্নান, ধূপবাস, কুস্কমবিরচিত পত্ৰলেখা অধিকতর রমণীয় ; তদপেক্ষণ রমণীয় নখচ্ছেদ এবং অলক রচনা । ইহারা প্রত্যেকেই যে নারীদেহের প্রসাধনের উপাদান, তাহাতে সন্দেহ কি ? কিন্তু এই রমণীয়তার তারতম্য কিসের জন্য ? স্বাক্ষদৃষ্টিতে বিচার করিলে, অন্তরঙ্গতার তাপত মাই কি ইহার একমাত্র কারণ নহে ? অলঙ্কার্য নারীদেহের সহিত যে অলঙ্কারের যত ঘনিষ্ঠ, যত অন্তরঙ্গ, যত অবিচ্ছেদ্য সম্বন্ধ, তাহার সৌন্দর্যই তত অধিক । বস্ত্রমাল্যবিভূষণ যত সহজে শরীর হইতে অপসারণ করা যাইতে পারে, সুরভিচন্দনের সুগন্ধ কিংবা কপোলবিন্যস্ত কুঙ্কমরচিত পত্ৰলেখা, শুভ্রচন্দনের ললাটিকা মুছিয়া ফেলা তত সহজ নহে। সেইজন্য বিদগ্ধ রমণীগণের প্রসাধনের সামগ্রী কালাগুরুপত্ৰলেখা, অলকরচনা। কটককুণ্ডলের স্কুল প্রাকৃতহৃদয়হারী ঔজ্জ্বল্য র্তাহীদের স্বক্ষ সৌন্দর্যবোধকে পীড়া দেয়। সাহিত্যের ক্ষেত্রেও সেই একই তত্ত্ব। কাব্যালঙ্কারসমূহকেও ত্ৰিবিধ শ্রেণীতে বিভক্ত করা যাইতে পারে। যিনি মুকবি তিনি বিদগ্ধ নারীর ন্যায় অলঙ্কার নির্বাচনের সময় (যদিও