পাতা:সাহিত্য-মীমাংসা - বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য্য.pdf/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՀԵ- সাহিত্য-মীমাংসা তখন ইহাদের বিভাব এই সংজ্ঞার দ্বারা নির্দেশ করা হইয়া থাকে। লৌকিক ব্যাবহারিক জগতে যখন আমরা ব্যাঘ্র প্রভৃতি দেখিয়া ভীত হই, প্রিয়ার সন্দর্শনে প্রেমাকুলহৃদয় হই, তখন ব্যাঘ্র প্রভৃতি কেবলমাত্র আমাদের চিত্তবৃত্তির প্রতি কারণ, অলৌকিক কারণ মাত্র। কিন্তু কাব্যপাঠজনিত সহৃদয়ের চিত্তে যে অনুভূতির সঞ্চার হয়, উহ। লৌকিক অনুভূতি। ‘মেঘনাদবধ-কাবা’ পাঠ করিয়া যে “উৎসাহ’ আমাদের হৃদয়ে অভিব্যক্ত হইয়া উঠে, যে বীররসের সঞ্চার হয়, উহা লৌকিক উৎসাহের সহিত সমপর্যায়ের নহে । দীনবন্ধুর সধবার একাদশী’, অথবা মাইকেলের একেই কি বলে সভ্যতা প্রভৃতি প্রহসন-নাট্যের অভিনয়দর্শনে আমাদের চিত্ত হাস্যরসের আবেগে যে বিকশিত হইয় উঠে, উহার সহিত সার্কাসের বিদূষকের (clown) মুখভঙ্গি ও অঙ্গবিকারজনিত কৌতুকময় অনুভূতির তুলনা হয় না। মোট কথা, কবিকর্মজনিত যে সকল ভাববিবর্তন আমাদের মনোজগতে লক্ষিত হইয়া থাকে উহারা সর্বথা অলৌকিক, উহাদেরই ‘রস’ এই বহুমানসূচক সংজ্ঞার দ্বারা ব্যপদেশ করা হইয়া থাকে। লৌকিক ভীতি, লৌকিক শোক, লৌকিক হাস্য, লৌকিক প্রীতির সহিত কবিকর্মসমুদ্ভূত ভয়ানক করুণ হাস্য অথবা শৃঙ্গার -রসের একীকরণ কখনই সম্ভবপর নহে। কবিপ্রতিভার ইহাই অলৌকিকত্ব। এই অলৌকিক প্রতিভাশক্তির স্পর্শেই ব্যাবহারিক জগতে লৌকিক ভীতির ব্যাঘ্র প্রভৃতি যে সকল সাধারণ ‘কারণ, তাহাই কাব্যজগতের ‘বিভাব রূপে পরিণত হয় । কাব্যজগতের অন্তভূত কায কারণ সমস্তই অলৌকিক,—রস অলৌকিক, বিভাব অলৌকিক, সমুদায়ের মূলে আছে অলৌকিক প্রতিভার স্ফুরণ। সুতরাং ব্যাবহারিক জগতের যাহা কারণমাত্র, কবিকর্মের কাল্পনিক বিশ্বে তাহাই ‘বিভাব’। উভয়ে সমগোত্রীয় হইলেও অভিন্ন নহে। একটি লৌকিক, অপরটি অলৌকিক । একটি বিধাতুবিরচিত বিশ্বের দুলঙ্ঘ্য কাযকারণশঙ্খলার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, অপরটি তাহার সম্পূর্ণ বিপরীত, মৰ্ম্মটাচার্যের ভাষায় নিয়তিকৃতনিয়মরহিত’, কবিপ্রজাপতির শৃঙ্খলহীন যদুচ্ছাই উহার একমাত্র নিয়ামক,