পাতা:সাহিত্য-মীমাংসা - বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য্য.pdf/৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

않 সাহিত্য-মীমাংসা না ? কাব্যপাঠ এবং অভিনয়দর্শনের ক্ষেত্রেই বা কেমন করিয়া রস প্রতীতিবিঘাতক অসম্ভাবনাপ্রস্থত ভেদবুদ্ধি তিরস্কৃত হইয়া থাকে ? আচার্য ভট্টনায়ক এই প্রশ্নের অতি সুন্দর মীমাংসা নির্দেশ করিয়াছেন, এবং পরবর্তী অভিনবগুপ্তাচার্য প্রমুখ মনীষিবৃন্দ সাহিত্যিক রসাচুভূতির বিশ্লেষণ প্রসঙ্গে আচার্য ভট্টনায়কের এই সমাধানকেই সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করিয়াছেন। ভট্টনায়ক বলেন : কাব্য ও নাট্যের সহিত ব্যাবহারিক শব্দসংঘাত ও লৌকিক প্রত্যক্ষের একটি প্রধান বৈলক্ষণ্য আছে, যাহার ফলে কাব্যবর্ণিত ও নাট্যাভিনীত অর্থসমূহই কেবলমাত্র শ্রোতা ও দর্শকের সমক্ষে সাধারণীভূত হইয়া প্রকাশ পায়, যাহার ফলে সামাজিকের সংকীর্ণ ব্যক্তিত্ববোধ দূর হইয়। আত্মার সহিত নাটকীয় চরিত্রসমূহের ভেদজ্ঞান তাৎকালিকভাবে আচ্ছাদিত হইয়া যায়। কি সেই বৈলক্ষণ্য—যাহার ফলে এই সাধারণীকরণ বা universalisation সম্ভবপর হয় ? কাব্যের ক্ষেত্রে দোষাভাব, এবং গুণ (যথা, ওজঃ, প্রসাদ, শ্লেষ প্রভৃতি ) ও অলঙ্কারসমূহের যথাযথ সন্নিবেশই এই সাধারণীকরণের মূলে। আমরা পূর্বেই দেখিয়াছি যে, কাব্যের সহিত ব্যাবহারিক শব্দপ্রয়োগের পার্থক্য প্রধানত বিক্রোক্তি’ অথবা অলঙ্কার সমাবেশে । এইভাবে বিবিধগুণালঙ্কারমণ্ডিত, দোষসম্পর্কশূন্য শব্দসমূহের গ্রহণের দ্বারা কবি র্তাহার পাত্র, পাত্রী, দেশ, কাল, অবস্থা প্রভৃতি বর্ণনীয় বস্তুসমূহের মধ্যে একটি শাশ্বতরূপ সংযোজনা করিতে সমর্থ হন, এবং তাহাদের মধ্যে এমন একটি বিশিষ্ট শক্তির সঞ্চার করিতে পারেন, যাহা পাঠক অথবা শ্রোতার সংকীর্ণ ব্যক্তিত্ববোধ বিলীন করিয়া দিতে পারে। নাট্যের ক্ষেত্রেও অনুরূপ সামগ্রী অভিনীত পদার্থসমূহের সাধারণীকরণ বাস্তব করিয়া তুলে । আঙ্গিক, বাচিক, আহার্য এবং সাত্ত্বিক এই চতুবিধ অভিনয়, বিবিধ নাট্যালঙ্কার ও লাস্ত্যাঙ্গ, এবং গীত বাদিত্র ও আতোদ্যের বিচিত্র সমাবেশের দ্বারা অভিনীত পদার্থসমূহ দেশ, কাল এবং অবস্থার সংকীর্ণ পরিধি উত্তীর্ণ হইয়া সর্বদেশকালসাধারণ শাশ্বতরূপে সহৃদয়ের দৃষ্টিতে প্রতিভাত হয়। স্বতরাং এই