পাতা:সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২৬৪
সাহিত্য

 কিন্তু এ-সব তো গেল ভাবের কথা। কাজের কথা কি আমাদের সভার মধ্যে পাড়িবার কোনো স্থান নাই?

 সাধারণভাবে মানুষের মধ্যে পরস্পর প্রীতিস্থাপন কল্যাণকর সন্দেহ নাই, সাহিত্যিকদের মধ্যেও প্রীতিবন্ধন যদি ঘনিষ্ঠ হয় সে তো ভালো কথা, কিন্তু বিশেষভাবে সাহিত্যিকদের মধ্যেই প্রীতিবিস্তারের যে বিশেষ ফল আছে তাহা মনে করি না। অর্থাৎ লেখকগণ পরস্পরকে ভালোবাসিলেই যে তাঁহাদের রচনাকার্যের বিশেষ উপকার ঘটে এমন কথা বলা যায় না। ব্যবসায় হিসাবে সাহিত্যিকগণ বিচ্ছিন্ন, স্ব-স্ব-প্রধান; তাঁহারা পরস্পর পরামর্শ করিয়া জোট করিয়া সাহিত্যের যৌথ-কারবার করেন না। তাঁহারা প্রত্যেকে নিজের প্রণালীতে নিজের মন্ত্রে নিজের সরস্বতীর সেবা করিয়া থাকেন। যাঁহারা দশের পনথা অনুসরণ করিয়া পুঁথিগত বাঁধা মন্ত্রে কাজ সারিতে চান দেবী কখনোই তাঁহাদিগকে অমৃতফল দান করেন না। সাহিত্য সাম্প্রদায়িকতা অনিষ্টকর।

 কার্যগতিকে যাঁহারা এইরূপ একাধিপত্য দ্বারা পরিবেষ্টিত, কোনো কোনো স্থলে তাঁহাদের মধ্যে পরিচয় ও প্রীতির অভাব, এমন-কি, ঈর্ষাকলহের সম্ভাবনা ঘটে। এক ব্যবসায়ে প্রতিযোগিতার ভাব দূর করা দুঃসাধ্য। মনুষ্যস্বভাবে অনেক সংকীর্ণতা ও বিরূপতা আছে, তাহার সংশোধন প্রত্যেকের আন্তরিক ব্যক্তিগত চেষ্টার বিষয়—কোনো কৃত্রিম প্রণালীদ্বারা তাহার প্রতিকার সম্ভবপর হইলে আমাদের অদ্যকার উদ্‌যোগের অনেক পূর্বে সত্যযুগ ফিরিয়া আসিত।

 দ্বিতীয় কথা, মাতৃভাষার উন্নতি। গৃহের উন্নতি বলিলেই গৃহস্থের উন্নতি বুঝায়, তেমনি ভাষার উন্নতির অর্থই সাহিত্যের উন্নতি, সাহিত্যের শ্রীবৃদ্ধি ছাড়া অন্য কোনো উপায়েই ভাষা সমৃদ্ধিলাভ করিতে পারে না। কিন্তু কী করিলে সাহিত্যের উন্নতি-বিধান হইতে পারে সে ভাবনা মনে উদয় হইলেও ভাবিয়া তাহার কিনারা পাওয়া কঠিন। অনাবৃষ্টির দিনে কী