পাতা:সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৮৪
সাহিত্য

করিবার চেষ্টা করিতে থাকে। অবশেষে সৌন্দর্যবোধ যতই বিকাশ পায় ততই স্বাতন্ত্র্য নহে, সুসংগতি—আঘাত নহে, আকর্ষণ—আধিপত্য নহে, সামঞ্জস্য, আমাদিগকে আনন্দ দান করে। এইরূপে সৌন্দর্যকে প্রথমে চারি দিক হইতে স্বতন্ত্র করিয়া লইয়া সৌন্দর্যকে চিনিবার চর্চা করি, তাহার পরে সৌন্দর্যকে চারি দিকের সঙ্গে মিলাইয়া লইয়া চারি দিককেই সুন্দর বলিয়া চিনিতে পারি।

 একটুখানির মধ্যে দেখিলে আমরা অনিয়ম দেখি, চারি দিকের সঙ্গে অখণ্ড করিয়া মিলাইয়া দেখিলেই নিয়ম আমাদের কাছে ধরা পড়ে; তখন যদিচ ধোঁয়া আকাশে উড়িয়া যায় ও ঢেলা মাটিতে পড়ে, সোলা জলে ভাসে ও লোহা জলে ডোবে, তবু এই-সমস্ত দ্বৈতের মধ্যে ভারাকর্ষণের এক নিয়মের কোথাও বিচ্ছেদ দেখি না।

 জ্ঞানকে ভ্রমমুক্ত করিবার এই যেমন উপায় তেমনি আনন্দকেও বিশুদ্ধ করিতে হইলে তাহাকে খণ্ডতা হইতে ছুটি দিয়া সমগ্রের সহিত যুক্ত করিতে হইবে। যেমন, উপস্থিত যাহাই প্রতীতি হয় তাহাকেই সত্য বলিয়া ধরিয়া লইলে বিজ্ঞানে বাধে, তেমনি উপস্থিত যাহাই আমাদিগকে মুগ্ধ করে তাহাকেই সুন্দর বলিয়া ধরিয়া লইলে আনন্দের বিঘ্ন ঘটে। আমাদের প্রতীতিকে নানা দিক দিয়া সর্বত্র যাচাই করিয়া লইলে তবেই তাহার সত্যতা স্থির হয়; তেমনি আমাদের অনুভূতিকেও তখনই আনন্দ বলিতে পারি যখন সংসারের সকল দিকেই সে মিশ খায়। মাতাল মদ খাইয়া যতই সুখবোধ করুক, নানা দিকেই সে সুখের বিরোধ; তাহার আপনার সুখ, অন্যের দুঃখ, তাহার আজিকার সুখ, কালিকার দুঃখ, তাহার প্রকৃতির এক অংশের সুখ, প্রকৃতি অন্য অংশের দুঃখ। অতএব এ সুখে সৌন্দর্য নষ্ট হয়, আনন্দ ভঙ্গ হয়। প্রকৃতির সমস্ত সত্যের সঙ্গে ইহার মিল হয় না।

 নানা দ্বন্দ্ব নানা সুখদুঃখের ভিতর দিয়া মানুষ সুন্দরকে আনন্দকে