পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (তৃতীয় ভাগ).pdf/১২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

• >७० ७ } বিজয় পণ্ডিতের মহাভারত । S) জন্মে। তবে কি দুই ব্যক্তির হাতের লেখা ? শেষে যেখানে সন তারিখ ও রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নাম লেখা আছে, এই অংশের লেখা পুথির অপর সমস্ত অংশ হইতে সম্পূর্ণ ভিন্ন, এজন্যও শেষ অংশ টুকু অন্যের লেখা বলিয়া গ্ৰহণ করিতে পারি। বোধ হয় বাণেশ্বরের পুথিতে শেষে কেহ ঐ অংশ যোজনা করিয়া দিয়া থাকিবে । 'o এত বৰ্ণাশুদ্ধি আছে বলিয়া পুথি খানি অনাদরের জিনিষ নহে। পূর্বে কত পণ্ডিত ও বাঙ্গালা ভাষার আদর করিতেন, তঁাহারা প্ৰাচীন বাঙ্গালা গ্ৰন্থ রচনা করিতেন, আমরা এই আলোচ্য পুথিখানি হইতে তাহার প্রমাণ পাইয়াছি ; এ জন্যও এ পুথি খানি 'আমাদের আদরের জিনিস । এখন লেখককে ছাড়িয়া গ্রন্থের একটু আলোচনা করিক । পুথিখানিতে মোট ১৮০ পাতে এবং পয়ার ও ত্ৰিপদীতে প্ৰায় ৬৫ ০০ শ্লোক আছে। কাশীরাম দাসের মহাভারতের শ্লোক সংখ্যা ৩৭ • ০ a । সুতরাং বৰ্ত্তমান পুথি খানি কাশীদাসী মহাভারত অপেক্ষা এক চতুর্থাংশেরও কম । পরাগলী মহাভারত ও ছুটিখার মহাভারতের বিবরণ পাঠ করিলে জানা যায়, সে উচ্চপদস্থ মুসলমান কৰ্ম্মচারিগণও অতি সমাদরে ভাষা মহাভারত শুনিতে ভাল বাসিতেন। সেইরূপ বাঙ্গালার নবাব আলীবর্দী খাও মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের নিকট মহাভারত শুনিতেন। অলীিবর্দী কোন মহাভারত শুনিতেন, তাহা ইতিহাসে প্রকাশ নাই। সম্ভবতঃ কৃষ্ণচন্দ্র এই বিজয়পণ্ডিতের মহাভারতই শুনাইতেন । এই বিজয়পণ্ডিতের গ্রন্থের উপর রাজেন্দ্ৰ কৃষ্ণচন্দ্রের অনুরাগ ছিল, সেই জন্যই তঁহার প্রিয় সভাসদ পণ্ডিত বাণেশ্বর স্বহস্তে গ্ৰন্থ খানি নকল করিয়াছিলেন। এখনও অনেক মহামহোপাধ্যায়। ভাল গ্ৰন্থ সুবিধা মত স্বহস্তে নকল করিয়া থাকেন । এরূপ স্থলে বাণেশ্বর একজন মহাপণ্ডিত হইয়াও রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের পাঠার্থ একখানি সুললিত বাঙ্গালা গ্ৰন্থ স্বহস্তে নকল করিবেন, তাহা অসম্ভব নয়। কেহ বলিতে পারেন, বাণেশ্বর সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত, প্ৰায় সংস্কৃতজ্ঞ মহাপণ্ডিতগণ দেশভাষার আদয় করেন না, এরূপ স্থলে সংস্কৃত কবি বাণেশ্বর বাঙ্গাল কবির গ্ৰন্থ নকল করিবেন, ইহা কি সম্ভব ? বাণেশ্বরের বাঙ্গালা ভাষায় অনুরাগ ছিল না, তাহাঁই বা কে বলিতে পারে? যে রাজেন্দ্ৰ কৃষ্ণচন্দ্রের সভায় রায় গুণাকর, কবিরঞ্জন, রসসাগর প্রভৃতি বঙ্গ কবি বিরাজ করিতেন, যে কৃষ্ণচন্দ্র-উক্ত কবিগণের রচনা অতিশয় ভাল বাসিতেন, সেই বঙ্গভাষানুরাগী রাজেন্দ্র কৃষ্ণচন্দ্রের প্ৰিয় বাণেশ্বর পণ্ডিত বাঙ্গালার আদর করিতেন না, তাহা কিরূপে বলিব ? গুপ্তিপাড়ানিবাসী সুকবি কালীমীর্জা আপনাকে বাণেশ্বর পণ্ডিতের শিষ্য বলিয়া পরিচয় দিয়াছেন। কালীমীর্জার আধ্যাত্মিক বাঙ্গালা গানের মধ্যেও বাণেশ্বর কবির গুরু বলিয়া অভিহিত হইয়াছেন, এই প্ৰমাণ দ্বায়াও বাণেশ্বরের বাঙ্গাল কবিতার উপর অনুরাগ ছিল, ইহা বলা অসঙ্গত হইতে পারে না । সঞ্জয়, কবীন্দ্র পরমেশ্বর ও রামেশ্বর নদীর যে মহাভারত বাহির হইয়াছে, তাহদেরও