বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (দ্বাদশ ভাগ).pdf/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(8 সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকা s Je তন উপকথা বর্তমান উপন্যাসের রাসায়নিক উপাদান ! প্ৰাচীন রীতি এখন পরিমার্জিত হইয়া উন্নত হইয়াছে ভিন্ন সম্পূর্ণ নূতন একটা কিছু প্ৰস্তুত হয় নাই। পূর্বকালের উপকথা-রচয়িত্বগণ রাজা, রাজপুত্ৰ, মন্ত্রী, মন্ত্রিপুত্ৰ, পাত্ৰ, মিত্ৰ, কোটাল, ব্যাঙ্গমা, ব্যাঙ্গামী, রাঘব মৎস্ত, তালপত্রের খাড়া, ব্যাঘ্ৰ, ভলুক, সিংহ প্ৰভৃতি পশু ও শুক প্রভৃতি পক্ষীর ভাষা লইয়া প্ৰস্তাবনা আরম্ভ করিয়া যুবক-যুবতীর প্ৰেম বিরহ, বিবাহ, দেবভক্তি, পারিবারিক ক্রিয়া প্রভৃতি ব্যাপারে পরিजमांश्g कडिन । প্ৰাচীন উপকথা অদ্যাপিও বঙ্গসমাজ হইতে বিলোপ হয় নাই। এখনও বর্ষীয়সী পিতামহী এবং নিষ্কৰ্ম্ম বধীয়ান পিতামহগণের নিকট ব্যাঙ্গম ব্যাঙ্গমীর কথা আর তালপত্ৰখাড়ার কথা শুনিতে পাওয়া যায়। এ দিকে আবার নিরক্ষর কৃষক সমাজের রসিক পুরুষের নিকট “মধুমালার কথা” “কেশবতী রাজকন্যার কথা” শুনিয়া অনেক নিম্নশ্রেণীর লোক মহাআমোদ উপভোগ করিয়া থাকে। নিম্নশ্রেণীর হিন্দুসমাজে হিন্দুভাবের উপকথা আর মুসলমানী “কেচ্ছ।” লইয়া গোলেবকাওয়ালীর কখ, শোনাভানের কথা-হাতেমতাই ইত্যাদি অনেক উপকথা প্ৰচলিত আছে। আরব্যগণ “কেচ্ছা” বলিয়া যে সকল উপকথা আরব্য বা পারস্য উপন্যাসের ভাষা হইতে সংগ্ৰহ করিয়া সাধারণের মধ্যে প্ৰকাশ করিয়াছেন, উহা হইতেও বঙ্গীয় উপকথার অনেক উপাদান সংগৃহীত হইয়াছে। বস্তুতঃ যে সময় ইসলাম গৌরব ভারতে একাধিপত্য করিতেছিল-মুসলমানী ভাষা যখন হিন্দু ভারতের এক মাত্র আলোচ্য বিষয় ছিল, সেই সময় হইতে বঙ্গে উপকথা প্রচলনের মাত্ৰাধিক্য আরম্ভ হয়। মুসলমান জাতির কি বিদ্বান, কি অবিদ্বান সকলই কিছু কিছু খোসাগল্পপ্রিয় এবং বিলাসী। উপকথা প্ৰস্তুত-প্ৰণালী ইহাদের একটা জাতিগত স্বভাব অথবা ধৰ্ম্মবিশেষের কাহিনী। কোরাণের “ইউসুপ সুরা” ইহার দৃষ্টান্ত। ইসলাম ধৰ্ম্মতত্ত্বের সঙ্গে উপকথা মণিকাঞ্চনের ন্যায় সংযোজিত। ভারতে যখন মৌলবী, মুনসী প্ৰভৃতি বিদ্বৎশ্রেণীর আবির্ভাব ঘটে, তখন হইতেই আরব্য, পারস্য প্রভৃতি ভাষার উপকথা দেশময় ব্যাপ্ত হয়। এই সময় হইতে চিরকল্পনাপ্রিয় হিন্দুজাতি কল্পনাদেবীর হাত পায়ের প্রসর দিয়া নানারূপ সাজশয্যায় তাহাকে সাধারণের মধ্যে ছাড়িয়া দিলেন। উচ্চ শ্রেণীর হিন্দুগণ উপকথা বলিতে বা লিখিতে গিয়া পুরাণের সরঞ্জাম লইয়া মুসলমানী উপকথার চুণ, খড় যোগে বড় বড় উপকথা-গৃহ প্ৰস্তুত করিতে লাগিলেন। নিম্নশ্রেণীর হিন্দুগণ রাজপুত্ৰ, সদাগর ও সদাগর পুত্ৰ লইয়া উপকথা কল্পনা করিয়া মুসলমানী পরী, ব্যান্ত্র ও ভালুকের ভাষায় আরো ভাষা ফলাইতে লাগিলেন । উপকথার জনক জননীগণ কেহ শিক্ষিত, কেহ অশিক্ষিত, কেহ অৰ্দ্ধশিক্ষিত কেহ বা নিরক্ষর। আমরা নিরক্ষার ঔপন্যাসিকের উপকথা লইয়া অদ্য আলোচনা করিব। যে সকল নিয়শ্রেণীর লোক উপকথা প্ৰস্তুত করিতে লাগিল,তাহারা বর্ণজ্ঞানশূন্য-সুতরাং তাহারা যাহা রচনা করিল, তাহা তাহদের সমাজের উপযোগী এবং তাঁহাদের সমাজের পূর্ণ আদর্শ। এই জন্য প্ৰায় অধিকাংশ উপকথায় গ্ৰাম্যতা গুণই হউক আর দোষই হউক, ক্রমে প্ৰবেশ লাভ করিয়াছিল।