বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (দ্বাদশ ভাগ).pdf/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Գ a সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকা [ ২য় সংখ্যা নিরক্ষর কবি ও গ্ৰাম্যকবিতা ( পূৰ্বপ্রকাশিতের পর ) বঙ্গের নিরক্ষর কবিগণের ক্ষুদ্র জীবনী আলোচনা করিলে বুঝিতে পারি যে, এই ভারতের ক্ষুদ্র অংশের কবিত্বে বঙ্গভূমি যখন আলোকিত, তখন না জানি সমগ্ৰ ভারতীয় নিরক্ষর কবির কবিত্ব আলোচনা করিলে কি মহা আলোকসমুদ্রে পড়িব! এই প্রসঙ্গে আমরা সৰ্ব্বপ্রথমে বঙ্গীয় নিৰ্বাক্ষর একটি স্ত্রীকবির জীবনী আলোচনা করিয়া পাঠকের মনস্তুষ্টি করিবার চেষ্টা করিব । পুরাতন যশোহর আধুনিক খুলনা জেলার অতি নিকট প্রায় সুন্দরবনের পার্শ্বস্থিত “জাপুস” গ্রামে একটি পোদ জাতীয় রমণী নিরক্ষার স্ত্রীকবিগণের মধ্যে অতি প্ৰসিদ্ধিলাভ করিয়াছিল। ইহার বংশীয় ব্যক্তিগণ কৃষিকাৰ্য্য দ্বারা জীবন যাত্ৰা নিৰ্বাহ করিত । বর্ণিত কামিনীটির অসাধারণ কবিত্ব প্রতিভা একসময় দেশীয় কৃষক-গায়কগণের ওস্তাদ রূপে পরিগণিত ছিল, এই বংশের কৃষকগণ এ অঞ্চলে অতি গণ্য মান্য । ইহাদের সাধারণ নাম “কাবেল”, ইহা ছাড়া ইহাদের অপর কোন বিশেষ পরিচয় পাইবার উপায় নাই। ইহারা একে নিরক্ষার তাহাতে জঙ্গলিজাতি-বিশেষতঃ এই কাবেল-বংশ বৰ্ণিত কামিনী ব্যতীত অপর কেহ কবিত্ব শক্তি লইয়াও জন্মগ্ৰহণ করে নাই । কোন সময় এই কাবেলকামিনীর ভগিনীপুত্র তারাচাঁদ একটি “গাজি গীতের দল” লইয়া স্থানে স্থানে নাম প্ৰকাশ করিয়াছিল মাত্র। তারাচাদের দলের গীত আমি শুনিয়াছি, তখন আমার বয়স ১৩, ১৪ বর্ষ মাত্ৰ । একদিন তারাচাঁদ বিশেষ কোন কাৰ্য্য গতিকে আমার আত্মীয় খুলনা জেলার বেলফুলিয়া পরগণার শ্ৰীফলতলা গ্রামে ৬/ দীননাথ চক্ৰবৰ্ত্তীর বাটীতে উপস্থিত হয়। সেই সময় তারাচাদ তাহার মাসির অসীম কবিত্বময়ী জীবনীসহ দুইটি গীত এবং গুটিকয়েক শ্লোক বলিয়াছিল। উহার পূৰ্ণাংশ না হইলেও অনেকটা অংশ আমি পাঠককে উপহার দিতে পারিব। এই অঞ্চলে উক্ত রমণীকে অদ্যাপিও “কবেলকামিনী” বলিয়া থাকে। এই কাবেল নারী যে কত গীতশ্লোক প্ৰস্তুত করিয়াছে, তাহার নির্দিষ্ট সংখ্যা নাই। ইহার রচিত গীতগুলি প্ৰায়ই শ্যামাবিষয়ক । শ্লোকগুলি কতকটা আদিরসমিশ্রিত মার্জিত শব্দ দ্বারা গ্রথিত । আমার মনে পড়ে, তারাচাঁদ যেন নিম্নের শ্লোকটি অবিকল এইরূপ বলিয়াছিল। অথবা আমার পূর্ণ বয়সের জ্ঞানের স্মৃতিই এইরূপ হইবে। যথা ১ । হাত ঝুম ঝুম পায়ে পাইজোড় কোমর দুলে যায়। যৌবন জোয়ার ছুটুলে পরে কুল ছাপিয়ে ধায় ৷ পাতার আড়ে ফড়িঙ্গ উড়ে দেখতে চমৎকার। • বাসি ফুলের মধু খেতে ভোমরা করে ঝনৎকার। কাবেল কামিনীর গীত