পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (প্রথম খণ্ড).pdf/৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

मन् ४७० >]] সাহিত্য-পরিষদ-পত্রিকা । G বিদেশীয় ভােব গ্ৰহণ করিয়াছেন, বঙ্কিম বাবু বিকৃত-মস্তিষ্ক ! কিন্তু সে নিন্দ উল্লঙ্ঘন করিয়া সমস্ত বঙ্গবাসীর জয় জয় নাদ দেশ পূর্ণ করিল,—গগনে উত্থিত হইল'। দুৰ্গেশনন্দিনীতে বিদেশীয় শিক্ষার পরিচয় যথেষ্ট আছে। ওসমান ও জগৎ সিংহের উদ্যম ও উৎসাহ বঙ্গীয় সাহিত্যে অদৃষ্ট-পূৰ্ব্ব । আয়েসার প্রগাঢ় নিভৃত হৃদয়ের ভাব বঙ্গীয় সাহিত্যে অদৃষ্ট-পূৰ্ব্ব । বিমলার অপূৰ্ব্ব জিঘাংসা ও বৈরানিৰ্য্যাতন বঙ্গীয় সাহিত্যে অদৃষ্ট-পূৰ্ব্ব। বিদেশীয় শিক্ষা লাভ করিয়া,-বহু বিদ্যা লাভ করিয়া বঙ্কিমচন্দ্ৰ দেশীয় সাহিত্যের পুষ্টিসাধন করিয়াছেন। এইটী আধুনিক সময়ের ভাব, এই ভােব বঙ্কিমচন্দ্ৰে পূৰ্ণবিকাশ প্রাপ্ত হইয়াছে। এটা কি দোষ ? শেক্ষাপীয়রের সময়ে ইংরাজ কবিগণ ইতালীয় সাহিত্যভাণ্ডার হইতে রত্বরাশি সংগ্ৰহ করিয়া ইংরাজি সাহিত্য উজ্জ্বল করিয়াছেন । ড্রাইডেনের সময়ে ইংরাজ কবিগণ ফরাসী সাহিত্যের রত্বরাজিতে দেশীয় সাহিত্য অলঙ্কাত করিয়াছেন। প্রাচীন কালে রোমীয় কবি ভজিল গ্ৰীক সাহিত্যের সম্পত্তি দ্বারা নিজ সাহিত্যের উন্নতি সাধন করিয়াছিলেন । আধুনিক বঙ্গবাসিগণ ইংরাজি সাহিত্যভাণ্ডার হইতে রত্ন লাভ করিতেছেন,—একটু উদ্যম, উৎসাহ, স্বদেশপ্রিয়তা লাভ করিতেছেন। এই সদগুণগুলি আর একটু অধিক পরিামাণে আহরণ করিতে পারিলে দেশের মঙ্গল । আমরা বঙ্কিমবাবুর একখানি পুস্তকের কথা বলিলাম। র্তাহার কমনীয় কল্পনা হইতে উদ্ভুত সকল চিত্রের কথা বলিবার আবশ্যকতা নাই। সন্ধ্যার আকাশে যেমন একটার পর একটি জ্যোতিৰ্ম্ময় নক্ষত্ৰ প্ৰকাশিত হইয়া শেষে নৈশ গগন জ্যোতিৰ্ম্ময় করে, বঙ্কিমচন্দ্রের চিত্রগুলি সেইরূপ একটীর পর একটী ফুটিয়া সাহিত্যাকাশ জ্যোতিৰ্ম্ময় করিল। অরণ্যবাসিনী কপালকুণ্ডলার চিত্রটি কি অপূৰ্ব্ব, কি বিস্ময়কর ! দেশবিদেশবিচারিণী গিরিজায়ার গীত কি সুমধুর, কি হৃদয়গ্ৰাহী ! গরীয়সী সুৰ্য্যমুখী, প্রশান্তমতি কমলমণি, দুঃখিনী কুন্দনন্দিনী, আর চন্দ্ৰশেখর, প্রতাপ, ভ্রমর, দেবী চৌধুরাণী,-কত নাম করিব ? প্ৰভাতে নিকুঞ্জবনে বন-পুষ্পগুলি যেরূপ একে একে ফুটিতে থাকে, বঙ্কিমের হৃদয়-কুঞ্জে কল্পনাপুষ্পগুলি সেইরূপ স্বতই ফুটিতে লাগিল। সে গুলিও সেইরূপ সুন্দর,-সেইরূপ সুমধুর ! অৰ্দ্ধ শতাব্দী পূর্বে আমরা পাশ্চাত্য শিক্ষা লাভ করিতাম,-আদ্যও তাহা করিতেছি, এবং ভরসা করি বহুদিন পৰ্যন্ত এই শিক্ষা লাভ করিতে থাকিব। অৰ্দ্ধ শতাব্দী পূর্বে আমাদের নিজের ধন প্রায় কিছু ছিল না, আমরা কাঙ্গালীর ন্যায় ফিরিতাম, আদ্য আমাদের নিজের একটু ধন সঞ্চয় হইয়াছে। মধুসূদন ও বঙ্কিমচন্দ্ৰ তাহার প্রধান আহরণকারী। এখন আমরা দৰ্প করিয়া বঙ্গীয় সাহিত্যের কথা বলি, স্নেহ করিয়া বঙ্গীয় সাহিত্যকে যত্ব করি, বাৎসল্যের সহিত বঙ্গীয় সাহিত্যকে পালন করি। ধনের সহিত একটু শক্তি হইয়াছে,-রাজনীতিতে বল, প্রাচীন ইতিহাস সম্বন্ধে বল, সাহিত্য ।