পাতা:সিমার - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বুবু তোমায় প্রেসার দিয়ে কাজ হাসিল করতে চাইবে । বলি নি তোমায় ? এতদিনেও কোর্টে মামলাটা তুমি করলে না । আমি ওই বুবুকে আদালতে তুলিব । আমার একমাত্র সাক্ষী ও । জীবনের পুরোটাই বাজি ধরেছি, সাদিক । শুধু তোমার মুখের কথায় ভুলিনি। একজন মেয়ে, একজন মেয়ের জন্য কতখানি করে, মিনু তুমি বুবুকে বলবে, সাধের বোন, পরানের পরান, বলবে বুকে, আমি সেই বোনের কাছে দাবি করছি, আমার আপীল, বুবু কোর্টে সত্য কথা বলুক । চাইছে। বুকুই আমার আদালত । হ্যাঁ সাদিক, আমি সেই আগ্নেয় জীবনপিণ্ড । দাহ ছাড়া কিছুই নেই। আমার । বলতে-বলতে শিরিনের বোধহয় মাথা ঘুরে উঠল । ধাপ করে উনি সোফায় ঢলে পড়ে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে বললেন-তোমায় বলি । প্রার্থনা করি, কারুকে বলে দিও না, আমার বিদ্যে নেই। স্কুল ফাইনাল পাশ-করা টীচার । হােমের ছাত্র-ছাত্রী কমে যাবে । দুমুঠো অন্ন পাই । আমাদের ভাতে মেরো না, মিনু । বলে উনি ক্লান্ত হয়ে চোখ বুজলেন । আমার প্রায় কান্না পেয়ে গিয়েছিল । কথা বলতে পারছিলাম না । মাসির গা ছুয়ে বললাম-আমি তোমার বন্ধু ছিলাম খালামা । হয়তো কখনও কোনো ব্যাপারে তোমার অনিষ্ট আশঙ্কা করেছি, নিজে কখনও অনিষ্ট করিনি । মাসি হঠাৎ আমার হাত দুখানি জড়িয়ে পাগলের মতন ডুকরে-ডুকরে কাঁদতে লাগলেন । কিছুক্ষণ চুপ-চাপ সেই কান্না গলে-গলে ঝরল। মাসি একসময় চুপ করলে আমি বললাম-আমি যাচ্ছি, খালামা । মাসি মুখ তুললেন । বললেন-যাবে ? আমি একলা থাকি। রোজ যদি একবার এসে দেখা দাও, আমার মন ভালো থাকে । এখানে এলে আমি তোমায় পড়াতে পারি। বুকুর কাছে কখনও যাব না, মিনু’। যেতে বোলো না । আমি উঠে পড়লাম। সাদিকুল কী যেন বলতে গিয়ে থেমে গেলেন। রাস্তায় নেমে রিকশা ডাকলেন । আমি রিকশায় উঠে পড়লাম । মামা সহসা বলে উঠলেন-আমার কথার ধারা পড়ে গেছে। শিরিন নিজের মনের মতন চিন্তা করতে শিখেছে। বলেই উনি রিকশায় আমার পাশে উঠে বসলেন । রিকশা চলতে শুরু করলে বললেন--সামনেই আমি নেমে যাব । তারপর পথে-পথে অনেক রাত অদি একলা ঘুরে বেড়াব। পাটি অফিস যাব একবার । রাত্রে আমি অন্ধকারের তরঙ্গ দেখতে পাই। প্রত্যেক মানুষেরই জীবনে একদিন অন্ধকার ভালো লাগে । শ্ৰীকান্ত পড়েছ ? -8ர் Se