পাতা:সিমার - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫১

উইকিসংকলন থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আসলে তা মস্ত ফাঁকির কথা। ভালোবাসার ধর্মই হচ্ছে এক হয়ে ওঠা, কিন্তু এক হতে চাইলেই কি পূর্ণ এক ও অভিন্ন সত্তা হওয়া যায়, না, মানুষ তা পারে ? ধর্মে রুচিতে সংস্কারে, মতে আদর্শে, এক না হয়ে ভালোবাসায় এক হওয়া আত্ম-প্রবঞ্চন । বললাম, ওটা একটা বইতে পড়া তত্ত্বকথা। রাবেয়া বললে, সে তত্ত্বকথা তুমিই শুরু করেছ। ‘পূর্ণ এক ও অভিন্ন সত্তা, কথাটা কি আমার ? ভেবেছিলে, তোমরা দিনে দিনে এক হয়ে উঠছ, কিন্তু যত দিন গেছে, বাইরে বাইরে এক হয়ে থাকলেও অন্তরের ব্যবধান বেড়েই গেছে । যে সংসারে হামিদুল মানুষ, সেখানে পুঁতি-পাঁকে কেবলই ধর্মের কুসংস্কার আর তার কোলাহল । মন সেখানে স্বাভাবিক স্বাধীন স্মৃর্তি ভুলে সংকীর্ণ হয়ে ওঠে। তোমার সাথে ব্যবধান তো বাড়বেই। বললাম, তবু আমরা এক ছিলাম । তোমায় ঠিক বোঝাতে পারব না, ঠিক কেমন এক ছিলাম একদিন । রাবেয়া বললে, একদিন ছিলে বৈকি ! নিশ্চয় ছিলে। কিন্তু যত দিন গেছে, তোমরা দুজনই আপন গতিতে তিলে তিলে ক্রমশ নিজেদের বদলে তুলছিলে । টের পাও নি । বন্ধুত্বের বঙ পাছে ফিকে হয়ে পড়ে, তাই মানুষ এই পরিবর্তনের কথা ভেবে ভয়ে তা গোপন রাখে, নিজের কাছেও সে কথা খুলে ধরে না, আত্ম-বিচার করে না । বললাম, তুমি এ-সব জানতে ? রাবেয়া বললে, এ-সব লক্ষ করতাম ! না হলে ভালোই যদি বাসতে পরস্পর, আমাকে ঘিরে যদি স্বপ্নই ছিল, এক সত্তা এক প্রাণ হয়েছিলে, তবে হামিদুল তোমায় ঈষা করত কেন ? তোমার নাম তার সামনে মুখে উচ্চারণ করাও যেত মা কেন ? তার এত সংকীর্ণতা কেন ? বল ? আমি আতঙ্কিত হয়ে বলে উঠি, এ-সব কি বলছি তুমি রাবেয়া ? রাবেয়ার চােখে জল স্ফুরিত হয়ে টলটল করছে। সে আত্মবিশ্বাসে জোর দিয়ে বলে ওঠে, ঠিকই বলছি আমি । বললাম, তবু আমরা এক ছিলাম, অন্তত একই বিশ্বাস থেকে আমরা তোমায় ভালোবাসতাম। বিশ্বাস করতাম হামিদুল মামুনকে এবং মামুন হামিদুলকে ভালোবাসে, এই বিশ্বাস আজও অক্ষুধা আছে। --বাজে কথা । এক তোমরা ছিলে না । গায়ের জোরে সত্য প্রমাণ হয় না । তাই যদি হয়, একই বিশ্বাস বুকে নিয়ে আমায় যদি তোমরা ভালেবেসে থাক, তবে আমিও যে তোমায় ভালোবাসি, সে ভালোবাসার মূল্য দিলে না কেন లి