পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/১০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মনের মত নবাব।
৯১

হইতে যে রাজকর পাঠাইয়া দিতেন, নওয়াজেস তাহা লইয়া এইরূপে স্যয় করিতে আরম্ভ করার ললাকে তাঁহার গোলাম হইয়া উঠিতে লাগিল। আলিবর্দ্দীর জীবনকাল যতই শেষ হইয়া আসিতে লাগিল, নওয়াজেসের গুপ্তকল্পনা ততই ফুটিয়া উঠিতে লাগিল। ক্রমে ক্রমে রাজবল্লভও কৃষ্ণবল্লভ নামক সুযোগ পুত্রের হস্তে ঢাকার রাজভাণ্ডার সমর্পণ করিয়া মুর্শিদাবাদে শুভাগমন করিলেন। সকলেই বুঝিল যে, আলিবর্দ্দীর মনোবাঞ্ছা যাহাই হউক না কেন, বুদ্ধ নবাবের শেষ নিশ্বাস পতিত হইতে না হইতেই, রাজবল্লভের সহায়তায়, অর্থবলে বলীয়ান নওয়াজে মোহম্মদই বঙ্গ, বিহার, উড়িষ্যার মসনদে আরোহণ করি- বেন। সিরাজের উজ্জ্বল ব্যবহারে যাহারা মর্মপীড়িত, নওয়াজেদের সদয় ব্যবহারে তাহারা পরম প্রীতিলাভ করিয়াছিলেন। সিরাজ বালক; নওয়াজে পরিণামদর্শী বয়োজ্যষ্ঠ। সিরাজদ্দৌলা একবার স্বাধীনভাবে রাজদণ্ড পরিচালনা করিবার অবসর পাইলেই ইচ্ছামত দুষ্টদমন করিবেন বলিয়া যাহাদের মনে মনে ভয় ছিল, তাঁহারা দেখিলেন যে, নওয়াজেসই মনের মত নবাব। কিছুই স্বচক্ষে দেখেন না, কিছুই স্বকর্ণে শুনেন “রাজকার্য লইয়া কোনরূপ গোযোগ করিবার কিছুমাত্র সম্ভাবনা নাই! সুতরাং স্বার্থলুব্ধ কর্মচারিদল সহজেই নওয়াজেসের পক্ষপাতী হইয়া উঠিতে লাগিলেন। নওয়াজেসও সময় বুঝিয়া মুক্তহস্তে অর্থব্যয় কারতে আরম্ভ করিলেন। জমীদারদল সময় বুঝিয়া নওয়াজেসের দর বারেই বিশেষরূপে গতায়াত করিতে আরম্ভ করিলেন। মাসিক বৃত্তির নির্দিষ্ট তঙ্কায় সিরাজদ্দৌলারই ভাল করিয়া আহার বিহার চলে না, লোকে আর কেমন করিয়া তাহার কাছে সাহায্য ভিক্ষা করিবে? আর ইচ্ছা থাকিলেই বা কে সাহসে বুক বাঁধিয়া সিংহবিবরতুল্য সিরাজদ্দৌলার