পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/১৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭৬
সিরাজদ্দৌলা।

ছোটখাট দুর্গ নির্ম্মাণ করেন।[১] কালক্রমে সেই দুর্গ “ফোর্ট উইলিয়ম” নামে পরিচিত হইয়া ইংরাজদিগের সর্ব্বপ্রধান আশ্রয়স্থান হইয়া উঠিয়া ছিল।

 এই নবজাত ইংরাজ-দুর্গের পশ্চিমপার্শ্বে ভাগীরথী-স্রোত অবিরাম গতিতে সমুদ্রাভিমুখে প্রবাহিত হইত; পূর্ব্বদিকে সিংহদ্বারের নিকট হইতে সরল সুপ্রশস্ত লালবাজারের রাজপথ বরাবর পূর্ব্বাভিমুখে বালিয়াঘাটা পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। নগররক্ষার আয়োজন শেষ হইলে, দুর্গরক্ষার জন্য ইংরাজের পূর্ব্ব, উত্তর এবং দক্ষিণ—তিনদিকে তিনটি তোপমঞ্চ নির্মাণ করিয়া, তাহার উপর লক্ষ্যভেদী আগ্নেয়াস্ত্র পুঞ্জীকৃত করিয়াছিলেন। সকলেই ভাবিয়াছিলেন যে, সিরাজদ্দৌলা কোনক্রমে নগরপ্রবেশ করিতে পারিলেও, এই সকল তোপমঞ্চ বর্ত্তমান থাকিতে, কিছুতেই দুর্গপ্রবেশ করিতে পারিবেন না। বোধ হয়, সেই ভরসায় অনেকেই সাহস করিয়া দুর্গমধ্যে আশ্রয়গ্রহণ করিয়াছিলেন।

 যে সকল বীরপুঙ্গবগণ যুদ্ধের প্রথম উপক্রমেই নগরক্ষার আশায় জলাঞ্জলি দিয়া সর্ব্বপ্রযত্নে আত্মরক্ষা করিবার জন্য, ত্রাসকম্পিতকলেবরা ইংরাজ-মহিলার কণ্ঠলগ্ন হইয়া, দ্রুতপদে দুর্গাভ্যন্তর হইতে একে একে পলায়ন করিয়াছিলেন, তাঁহাদের মধ্যে কেহ কেহ আত্মকার্য্য সমর্থন করিবার জন্য উত্তরকালে অবলীলাক্রমে লিখিয়া গিয়াছেন যে,—“দুর্গপ্রাচীর যেরূপ জরাজীর্ণ হইয়া উঠিয়াছিল, তাহাতে সাহস করিয়া দুর্গমধ্যে বাস করিলেই বা কি হইত? আর কোন কারণে না হউক, নিতান্ত অন্নাভাবেই পরাজয় স্বীকার করিতে হইত! গোলা, বারুদ এত অপ্রচুর

  1. Early Records of British India.