পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬
সিরাজদ্দৌলা।

যশোগৌরব আছে; কিন্তু নিয়ত কর্তব্যপালনে আমোদ কোথায়! নবাব হইয়াও যদি কেবল একটিমাত্র মহিষী এবং রাজ্যচিন্তা লইয়াই পরিতৃপ্ত থাকিবেন, তবে আলিবর্দ্দী নবাব হইলেন কেন? আলিবর্দ্দী উন্নত জীবন যাঁহাদের নিকট এই সকল কারণে নিতান্ত উপহাসের বিষয় হইয়া উঠিয়াছিল, তাঁহারা পছন্দমত নবাব গড়িবার আশায় গায়ে পড়িয়া সিরাজের হিতাকাঙ্ক্ষায় নিযুক্ত হইতে লাগিলেন।

 বুড়া বয়সের অনেক গুণ; কিন্তু একটি প্রধান দোষ এই যে, বড় স্নেহপ্রবণ; সে স্নেহ-প্রবণতা প্রায়ই অন্ধতার নামান্তর মাত্র। স্নেহ পরায়ণ বুড়া স্বামী দ্বিতীয়পক্ষের তরুণী ভার্য্যার মেজাজ একেবারেই বিগড়াইয়া দেন; কেহ চোখে আঙ্গুল দিয়া দেখাইয়া দিলেও একটু মুচকি হাসি হাসিয়া সে কথা একেবারেই উড়াইয়া দেন;—কালে সেই স্বহস্ত-রোপিত বিষবৃক্ষে সুধাফল ফলে না! বুড়া মাতামহ নাতি নাতনীর অসঙ্গত আবদারেও সহায়তা করিয়া তাহাদের পরকাল মাটি করেন; কেহ সে কথা তুলিলে, “আহা! উহারা সেদিনের দুধের ছেলে, এখনই কি শাসন করিবার সময় হইয়াছে?” বলিয়া কথাটা একেবারেই পাড়িতে দেন না; বুড়া মাতামহের কাছে নাতি নাতনীরা চিরকালই “সেদিনের দুধের ছেলে” থাকিয়া যায়, কখনই তাহাদিগকে শাসন করিবার সময় উপস্থিত হয় না। আলিবর্দ্দীর বুড়া বয়সের অসঙ্গত স্নেহপ্রবণতায় সিরাজদ্দৌলার শাসনকার্যের সময় হইয়া উঠিল না!

 বাল্য ফুরাইল, কৈশোর আসিল; কৈশোরও ফুরাইল, যৌবন আসিল;—কেবল শাসনের সময় আসিলনা! সিরাজ ক্রমে ক্রমে কুক্রিয়াসক্ত যুবকদলের সঙ্গে মিলিত হইয়া তাঁহাদের দলপতি হইয়া উঠিলেন।