পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হীরাঝিল
১৯

য়ন করিয়াছিলেন। তিনি জানিতেন যে, যুক্তিসঙ্গত কথায় যে কোন আবদার ধরিয়া বসিলেই মাতামহ তাহা পূরণ করিতে কিছুমাত্র আপত্তি করিবেন না। সুতরাং সিরাজ একটি নুতন বাটি নির্ম্মাণের জন্য আবদার জানাইলেন। “একখানি জীর্ণ কম্বলে দশজন ফকির একসঙ্গে বসিয়া বৎসর কাটাইয়া দিতে পারে, কিন্তু একটিমাত্র পুরাতন প্রাসাদে প্রবীণ এবং নবীন দুইজন ভূপতি একসঙ্গে বাস করিলে তাঁহাদের মান সম্ভ্রম শীঘ্রই উপহাসের বিষয় হইয়া পড়ে!” কথাটি এত সরল, এত সুযুক্তিপূর্ণ এত স্বাভাবিক বলিয়া বোধ হইল যে, বুদ্ধ নবাদ আর দ্বিরুক্তি না করিয়া দৌহিত্রের জন্য এক নূতন প্রাসাদ নির্ম্মাণ করিবার আদেশ দিলেন; ইহার মধ্যে যে সিরাজের গুপ্ত পাপ-লিপ্সা লুক্কায়িত থাকিতে পারে, সে কথা একবারও আলিবর্দীর প্রবীণ মন্তকে প্রবেশ করিতে পারিল না!

 রাজধানীর নিকটে ভাগীরথীর পশ্চিম তীরে হীরারিলে।[১]—সেইখানে সিরাজের জন্য প্রমোদভবন নির্ম্মিত হইতে লাগিল। গৌড়ের ইতিহাস-বিখ্যাত বাদশাহদিগের সযত্ন-সঞ্চিত কারুকার্যভূষিত বহুমূল্য প্রস্তররাশি সংগ্রহ করিয়া প্রমোদভবন সুসজ্জিত করা হইল। সে হীরাঝিল নাই, সে রাজপ্রাসাদও আর নাই;—মহাপাপের জ্বলন্ত হুতাশনে দগ্ধ হইয়া তাহার শেষ ভস্মরাশিও ভাগীরথী-স্রোতে ভাসিয়া গিয়াছে! হীরাঝিলের প্রমোদভবনে সিরাজের সিংহাসন স্থাপিত হইয়াছিল; হীরাঝিলের প্রমোদভবনেই বিশ্বাসঘাতক মীরজাফর ক্লাইব

  1. হীরাবিলের স্থান নির্ণয় করিতে গিয়া পাদরী লং, হাণ্টার এবং আরও অনেকে গোলযোগ করিয়া গিয়াছেন। হীরারিলেই যে সিরাজের প্রমোদভবন এবং উত্তরকালে সিংহাসন স্থাপিত হইয়াছিল, তাহাতে সন্দেহ নাই। হীরাঝিল ভাগীরথীর পশ্চিম তীরে; মেজর রেণেল তাহার স্থান-নির্ণয় করিয়া গিয়াছেন।