পাতা:সিরাজদ্দৌলা - গিরিশচন্দ্র ঘোষ.pdf/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৮
সিরাজদ্দৌলা
সিরাজ। ছিঃ ছিঃ করিম চাচা, তুমি এমন?
করিম। জনাব, নেশাখোর মানুষ, আঁতের সুখে গেয়ে ফেলেছি! মুখের সুখে গাই একবার শুনুন, প্রাণ ঠাণ্ডা করে দিচ্ছি। জনাব, হুজুর, কদাচ ইংরাজের সঙ্গে সন্ধি কর্‌বেন না। ইংরাজ অতি ছল, অতি কপট। জনাব ক্ষণজন্মা, দ্বিতীয় সেকেন্দর সা, সমস্ত পৃথিবী অধিকার করবেন। দিনরাত যুদ্ধবিগ্রহে নিযুক্ত থাকুন। এই ইংরাজকে তোপে উড়িয়েই সসৈন্যে দিল্লীতে যাত্রা ক’রে, দিল্লীর সিংহাসন অধিকার করুন। আপনি না দিল্লীর তক্তে বস্‌লে দিল্লীর শোভা হবে না! মীর মদন চাচা, এইবাব মামার গাওনা পছন্দসই কি?
মীরমঃ। চাচা, তুমি বঙ্গবাসীর নিন্দা করো? আমরা কি বঙ্গবাসী নয়? তোমার বিবেচনায় কি আমরা সকলেই স্বার্থপর?
করিম। চাচা, এই রাজসভাসদের ন্যায় গোটাকতক আগাছা গজায়। নইলে এই বঙ্গভূমিরূপ বিধাতার সাধের উদ্যানে স্বার্থকুসুম ফুটেই রয়েছে, ছোট বড় সব স্ব স্ব প্রধান,—সুসৌরভে এ বলে আমায় দেখ—ও বলে আমায় দেখ! এ বাঙ্গালায় যিনি শান্তি স্থাপন কর্‌বেন, তিনি বিধাতা পুরুষ। বাঙ্গ্‌লা ফিরে গড়্‌তে হবে, পুরাণো বাঙ্গ্‌লায় চল্‌বে না।
সিরাজ। কেন করিম চাচা, তোমার এত বিরাগ কেন?
করিম। জনাব, এই বাঙ্গলায়, যদি তিন জনের দু’মত দেখাতে পারেন, তাহ’লে নাকে খৎ দিয়ে, আফিং ছেড়ে দেবো। তিন জনের তিন মত! যদি একমতে বাঙ্গ্‌লায় কাজ হতো, বঙ্গবাসী যদি এক মতে বল্‌তে শিখ্‌তো, তাহ’লে বাঙ্গলায় মাটী থাক্‌তো না,—সোণা হতো। বাঙ্গলার বুদ্ধিও যেমন প্রখর, প্যাঁচও তেমনি ঝুড়ি ঝুড়ি! এই প্যাঁচ খেলা চলেছে—যেটা কাটে, যেটা থাকে!