পাতা:সিরাজী উপন্যাস সমগ্র.pdf/২৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তাহার সাহস হয় না। গুরুদেবের অজ্ঞাতসারে যদি রুক্মিণীকে কোনওরূপে কৌশলক্রমে সরান যায়; তাহা হইলে তাহতে তাহার মত আছে। দেবকীনন্দন অত্যন্ত সতর্কভাবে রুক্মিণীর সহিত দেখা করিয়া সন্ন্যাসীর ভীষণ সংকল্পের কথা অভিব্যক্ত করিল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, রুক্মিণী কিছুতেই বিশ্বাস করিতে পারিল না। যে সন্ন্যাসী তাহাকে এত ভালোবাসেন এবং যত্ন করেন, তিনি যে তাহাকে দেবীর কাছে বলি দিবেন, তাহা কিছুতেই সে প্রত্যয় করিল না। কিন্তু দেবকীনন্দন যখন পুনঃ পুনঃ প্রতিজ্ঞা করিয়া দৃঢ়তার সহিত বলির কথা বলিতে লাগিল, তখনও বিন্দুমাত্র উদ্বেগ প্রকাশ না করিয়া বলিল ; দেবকী! ভাই, যদি সন্ন্যাসী ঠাকুর আমাকে সত্য সত্যই মহামায়ার সম্মুখে বলিদান করেন, তা' আমার সন্তপ্ত ও জ্বালাময় জীবনের পক্ষে এক পরম শান্তির কারণ হবে। আহা! এ হৃদয়ে যে ভীষণ অগ্নি প্ৰজ্বলিত হচ্ছে, তা” যদি তুমি বুঝতে, তা হলে আমার বলির সঙ্কল্পে বিচলিত না হয়ে সুখী ও সন্তুষ্টই হতে। আমরা অফুরন্ত দুঃখের কথা বলবার নয়। আমার দগ্ধ-জীবন জুড়াবার স্থান বসুধায় নাই। সুতরাং, প্রিয় ভ্ৰাতঃ! এমন হতভাগিনীর মৃত্যুর পথে কণ্টক না হয়ে তার সহায় হলেই পুণ্যলােভ ८ ।। দেবকীনন্দন রুক্মিণীর কথা শুনিয়া বিন্বিত এবং স্তম্ভিত হইয়া পড়িল। বুঝিতে পারিল যে, রুক্মিণী অত্যন্ত দুঃখিনী—একান্ত বিরাহিণী এবং শোকানলে বিদগ্ধ! রুক্মিণীর জীবন গভীর রহস্যে পরিপূর্ণ; রুক্মিণী নিজের যে পরিচয় দিয়াছে তাহা যথার্থী নহে। এই রমণী নিশ্চয়ই অভিজাতবংশীয়া। সামান্য-কুলোদ্ভব নারীতে এত সৌন্দৰ্য, এত সাহস, এত ধীরতা, এত গভীৰ্য কিছুতেই সম্ভব নহে। কিন্তু হায়! সন্ন্যাসীর খ হইতে ইহাকে বীচান অসম্ভব। নিজের জীবনের প্রতি যে এত নির্মম, তাঁহাকে রক্ষা করা কঠিন। এই রূপ চিন্তা করিয়া দেবকীনন্দন নিতান্ত হতাশ হইয়া পড়িল । Ngeir safgarw গভীর অন্ধকার রাত্রি। তাৱাদল ঝকমক করিয়া জুলিতেছিল। কিন্তু সহসা মেঘসকারে তাহাও দুবিয়া গেল। দুইদিকে গভীর বন। মধ্য দিয়া একটি পথ সীমান্তের ন্যায় সরলভাবে চলিয়া গিয়াছে। অদ্য প্ৰত্যুষে একটি ভীল-সর্দারের কাছে শুনিতে পাইয়াছিলেন যে, মহামায়ার মন্দিরে একটি পরমা সুন্দৰী যুবতী সন্ন্যাসিনীর আগমন হইয়াছে; তাই সেনাপতি রুমী খাঁ এবং কুমার নূরউদ্দীন 3.