পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেখিয়াছি। এখন জয়ন্তী রাজপুরীমধ্যে প্রবেশ করিয়াই বাহির হইয়া চলিয়া গিয়াছিল, এই সোজা কথাটা যেরূপে বাহিরে রাটল, তাহাতে লোকে বুঝিল যে, দেবী অন্তঃপুরমধ্যে প্রবেশ করিয়াই অন্তৰ্দ্ধান হইলেন, আর কেহ তাহাকে দেখিতে পাইল না। কাজেই লোকের দৃঢ় প্রত্যয় হইল যে, তিনি নগরের অধিষ্ঠাত্রী এবং রক্ষাকত্রী দেবতা, রাজাকে ছলনা করিা, এক্ষণে ছল পাইয়া রাজ্য পরিত্যাগ করিয়া গিয়াছেন। অতএব রাজ্য আর থাকিবে না। দুর্ভাগ্যক্রমে এই সময়ে জনরব উঠিল যে, মুর্শিদাবাদ হইতে নবাবি ফৌজ আসিতেছে। “ কাজেই রাজ্যধ্বংস যে অতি নিকট, সে বিষয়ে আর বড় বেশী লোকের সন্দেহ রহিল না। তখন নগরমধ্যে বোছক বাধিবার বড় ধুম পড়িয়া গেল। অনেকেই নগর ত্যাগ করিয়া চলিল । সীতারাম এ সকলের কোন সংবাদ না রাখিয়া চিত্তবিশ্রামে গিয়া একাকী বাস করিতে লাগিলেন। এখন তাহার চিত্তে ক্রোধই প্রবল—সে ক্রোধ সৰ্ব্বব্যাপক, সৰ্ব্বগ্রাসক । অন্যকে ছাড়িয়া ক্রোধ শ্রীর উপরেই অধিক প্রবল হইল। উদভ্ৰান্তচিত্তে সীতারাম কতকগুলি নীচব্যবসায়ী নীচাশয় অনুচরবর্গকে আদেশ করিলেন, “রাজ্যে যেখানে যেখানে যে সুন্দরী স্ত্রী আছে, আমার জন্য চিত্তবিশ্রামে লইয়া আইস ।” তখন দলে দলে সেই পামরের চারি দিকে ছুটিল। যে অর্থের বশীভূত, তাহাকে অর্থ দিয়া লইয়া আসিল । যে সাধবী, তাহাকে বলপূর্বক আনিতে লাগিল। রাজ্যে হাহাকারের উপর আবার হাহাকার পড়িয়া গেল । এই সকল দেখিয়া শুনিয়া চন্দ্রচূড় ঠাকুর এবার কাহাকে কিছু না বলিয়া তল্পী বাধিয়া মুটের মাথায় দিয়া তীর্থযাত্রা করিলেন । ইহজীবনে আর মহম্মদপুরে ফিরিলেন না। পথে যাইতে যাইতে চাদশাহ ফকিরের সঙ্গে তাহার সাক্ষাৎ হইল। ফকির জিজ্ঞাসা করিল, “ঠাকুরজি, কোথায় যাইতেছেন ?” চন্দ্র। কাশী ।—আপনি কোথায় যাইতেছেন ? ফকির । মোক্কা । চন্দ্র ৷ তীর্থযাত্রায় ? ফকির। যে দেশে হিন্দু আছে, সে দেশে আর থাকিব না। এই কথা সীতারাম শিখাইয়াছে । "לx