পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বাবিংশতিতম পরিচ্ছেদ পাঠককে বলিতে হইবে না যে, তুর্গমধ্যেই সিপাহীরা বাস করিত। ইহাও বলা গিয়াছে যে, সিপাহী সকলই দুর্গ ছাড়িয়া পলাইয়াছে, কেবল জন পঞ্চাশ নিতান্ত প্রভূভক্ত ব্রাহ্মণ ও রাজপুত পলায় নাই। তাহারা বাছ বাছ লোক-বাছা বাছ লোক নহিলে এমন সময়ে বিনা বেতনে কেবল প্রাণ দিবার জন্ত পড়িয়া থাকে না। এখন তাহারা বড় অপ্রসন্ন হইয়া উঠিল। এ দিকে মুসলমান সেনা আসিয়া পড়িয়াছে, মহা কোলাহল করিতেছে, কামানের ডাকে মেদিনী কাপাইতেছে—গোলার আঘাতে দুর্গপ্রাচীর ফাটাইতেছে—তবু ইহাদিগকে সাজিতে কেহ হুকুম দেয় না! রাজা নিজে আসিয়া সব দেখিয়া গেলেন। কৈ ? তাহাদের ত সাজিতে হুকুম দিলেন না! তাহার কেবল প্রাণ দিবার জন্য পড়িয়া আছে, অন্য পুরস্কার কামনা করে না, কিন্তু তাও ত ঘটিয়া উঠে না—কেহ ত বলেন, “আইস ! আমার জন্য মর!” তখন তাহারা বড় অপ্রসন্ন হইয়া উঠিল। তখন তাহারা সকলে মিলিয়া এক বৈঠক করিল। রঘুবীর মিশ্র তাহার মধ্যে প্রাচীন ' এবং উচ্চপদস্থ—রঘুবীর তাহাদিগকে বুঝাইতে লাগিল। বলিল, “ভাই সব! ঘরের ভিতর মুসলমান আসিয়া খোচাইয়া মারিবে, সেই কি ভাল হইবে ? আইস, মরিতে হয় ত মরদের মত মরি! চল, সাজিয়া গিয়া লড়াই করি। কেহ হুকুম দেয় নাই—নাই দিক ! মরিবার আবার হুকুম হাকাম কি ? মহারাজের নিমক্‌ খাইয়াছি, মহারাজের জন্য লড়াই করিব—ত হুকুম না পাইলে, কি সময়ে তার জন্য হাতিয়ার ধরিব না ? চল, হুকুম হোক না হোক, আমরা গিয়া লড়াই করি।” এ কথায় সকলেই সম্মত হইল। তবে, গয়াদীন পাড়ে প্রশ্ন তুলিল যে, “লড়াই করিব কি প্রকার ? এখন দুৰ্গরক্ষার উপায় একমাত্র কামান। কিন্তু গোলন্দাজ ফৌজ ত সব পলাইয়াছে। আমরা ত কামানের কাজ তেমন জানি না। আমাদের কি রকম লড়াই করা উচিত ?” তখন এ বিষয়ের বিচার আরম্ভ হইল। তাহাতে কুৰ্ম্মদ সিংহ জমাদার বলিল, “অত বিচারে কাজ কি ? হাতিয়ার আছে, ঘোড়া আছে, রাজাও গড়ে আছে। চল, আমরা হাতিয়ার বাধিয়া, ঘোড়ায় সওয়ার হইয়া রাজার কাছে গিয়া হুকুম লই। মহারাজ যাহা বলিবেন, তাহাই করা যাইবে।”