পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাঁতারাম بنیاد গৃহমধ্যে প্রবেশ করিয়া শ্ৰী দেখিলেন, গৃহ বড় নিভৃত, তাহার এক ঘরে এক কালী মূৰ্ত্তি, ফুল বিৰপত্রে অৰ্দ্ধেক ঢাকা পড়িয়া আছেন। গৃহে কেহ নাই, কেবল এক অশীতিপর বৃদ্ধা ব্রাহ্মণী । তিনিই দেবীর অধিকারিণী। চন্দ্রচূড়কে দেখিয়া বুদ্ধা বলিল, "তর্ক বাবা যে গো ?” চন্দ্র। কেমন মা ? মার পূজা চলিতেছে কেমন ? অশীতিপর বৃদ্ধার শ্রবণেন্দ্রিয় বড় তীক্ষু নহে। সে শুনিল, “তোমার বোনপো আছে কেমন ?” উত্তরে বলিল, “আজও জর সারে নাই, তার উপর পেটের ব্যামো, মা কালী রক্ষা করিলে হয়।” চন্দ্রচূড় এইরূপ দুই চারিটা কথাবাৰ্ত্ত বৃদ্ধার সঙ্গে কহিবাতে ঐ বুঝিল—বুড়ী ঘোর কালা। চন্দ্রচূড় তখন ঐকে বলিলেন, “এই বৃদ্ধ ব্রাহ্মণীর ঘরে তুমি আজ কাল থাক। তার পর গঙ্গারাম স্বস্থির হইলে, আমি তোমাকে তাহার কাছে লইয়া যাইব । তোমার নিজ বাড়ীতে এখন একা থাকিবে কি প্রকারে ? বিশেষ মুসলমানের ভয় ।” ঐ । ঠাকুর । মুসলমানের এ দৌরাত্ম্য কত কাল আর থাকিবে ? শাস্ত্রে কি কিছু নাই ? চন্দ্র। কিছু না, মা ! এ শাস্ত্রের কথা নয় মা ! হিন্দুর গায়ে বল হইলেই হইল। শ্ৰী। ঠাকুর । হিন্দুর গায়ে বলের কি অভাব ? এই ত এখনই দেখিলেন ? বলিতে বলিতে ঐ দৃপ্ত সিংহীর মত ফুলিয়া উঠিল। " চন্দ্র। যা দেখিলাম মা, সে তোমারই বল—এমন কি আবার হইবে ? দৃপ্ত সিংহী লজ্জায় মুখ অবনত করিল। আবার মুখ তুলিয়া বলিল, “হিন্দুর গায়ে বলের এত অভাব কেন ? কত লোকের বলের গল্প শুনি।” o তীক্ষবুদ্ধি চন্দ্রচূড় ত্রর অলক্ষ্যে, ঐর আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করিলেন, মনে মনে বলিলেন, “বেশ বাছা, বেশ! আমার মনের মত মেয়ে তুমি। " আমিও সেই কথাটা ভাবিতেছিলাম।” প্রকাশ্বে বলিলেন, “হিন্দুর মধ্যে বলবান কি নাই ? আছে বৈ কি। কিন্তু তাহারা মুসলমানের মুখ চায়। এই দেখ সীতারাম—সীতারাম না পারে কি ? কিন্তু সীতারাম রাজভক্ত—বাদশাহের অনুগ্রহীত—অকারণে রাজদ্রোহী হইবে না। কাজেই কে ধৰ্ম্ম রক্ষা করে ?” শ্ৰী। কারণ কি নাই ? জিজ্ঞাসা করিয়া ত্র আবার লজ্জায় মুখ নামাইল। বলিল, “আমি অবলা—আপনাকে কেন এত জিজ্ঞাসা করিতেছি, জানি না,—আমার মার শোকে ভাইয়ের দুঃখে মন কেমন হইয়া গিয়াছে—তাই আমার জ্ঞান বুদ্ধি নাই।” চন্দ্রচূড় সে কৈফিয়ংটা কানেও না তুলিয়া, বলিলেন, “কারণ ত ঘটে নাই। ঘটিলে কি হইবে বলিতে পারি না। সীতারাম যত দিন মুসলমানের দ্বারা অত্যাচার প্রাপ্ত না হয়েন, বোধ হয় তত দিন তিনি রাজদ্রোহ-পাপে সম্মত হইবেন না।” ঐ অনেকক্ষণ নীরবে ভাবিতে লাগিল । চাতক পক্ষী যেমন মেঘের প্রতি চাহিয়া থাকে, ততক্ষণ চন্দ্রচূড় তাহার মুখ প্রতি সেইরূপ করিয়া চাহিয়া রছিলেন। ঐ বহুক্ষণ অন্তমনা হইয়া ভাবিতেছে,