পাতা:সীতার বনবাস - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম পরিচ্ছেদ।
১৮

ইতস্ততঃ পর্য্যটন করিয়া, আহারোপযোগী ফল মুল প্রভৃতির। আহরণ করিতেন; গোদাবরীতীরে মৃদু মন্দ গমনে ভ্রমণ করিয়া, আমরা, প্রাহ্নে ও অপরাত্নে, শীতল সুগন্ধ গন্ধবহের, সেবন করিতাম। হায়! তেমন অবস্থায় থাকিয়াও, কেম সুখে সময় অতিবাহিত হইয়াছিল।

 লক্ষণ আলেখ্যের অপর অংশে অঙ্গুলিয়োগ করিয়া বলিলেন, আর্য্যে, এই পঞ্চবটী, এই শূর্পণখা। মুগ্ধস্বভাব সীতা, যেন যথার্থই পূর্ব্ব অবস্থা উপস্থিত হইল, এইরূপ ভাবিয়া, ম্লান বদনে বলিলেন, হা নাথ, এই পর্য্যন্তই দেখা শুনা শেষ হইল। রাম হাস্যমুখে সান্ত্বনা করিয়া বলিলেন, অয়ি বিয়োগকাতরে, এ চিত্রপট, বাস্তবিক পঞ্চবটী অথবা পাপীয়সী শূর্পণখা নহে। লক্ষ্মণ ইতস্ততঃ দৃষ্টিসঞ্চারণ করিয়া বলিলেন, কি আশ্চর্য্য! চিত্রদর্শনে চিরাতীত, জনস্থানবৃত্তান্ত বর্তমানবৎ প্রতীয়মান হইতেছে! দুরাচার মারীচ, হিরন্ময় মৃগের আকৃতিধারণ করিয়া, যে অতি বিষম অনর্থ ঘটাইয়াছিল, যদিও সম্পূর্ণ বৈরনির্যাতন দ্বারা তাহার যথোচিত প্রতিবিধান হইয়াছে, তথাপি স্মৃতিপথে আরূঢ় হইলে, মর্ম্মবেদনাপ্রদান করে। এই ঘটনার পর, আর্য্য মানবসমাগমশূন্য জনস্থান ভূভাগে, বিকলচিত্ত হইয়া, যেরূপ কাতরভাবাপন্ন হইয়াছিলেন, তাহা অবলোকিত হইলে, পাষাণও দ্রবীভূত। হয়, বজ্রেরও হৃদয় বিদীর্ণ হইয়া যায়।