পাতা:সীতার বনবাস - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২
সীতার বনবাস।

অবশেষে, তাঁহারাও তিন জনে, ঘোরতর বিপৎপাত স্থির করিয়া, এবং রামের তাদৃশী দশা দর্শনে নিতান্ত কাতর ভাবাপন্ন হইয়া, অশ্রুবিসর্জন করিতে লাগিলেন।

 কিয়ৎ ক্ষণ পরে, রাম, উচ্ছলিত শোকাবেগের কথঞ্চিৎ সংবরণ ও নয়নের অশ্রুধারামার্জ্জন করিয়া, সস্নেহ সম্ভাষণ পূর্ব্বক, অনুজদিগকে সম্মুখদেশে বসিতে আদেশ করিলেন। তাঁহারা, আসনে উপবেশন করিয়া, কাতর ভাবে, রামচন্দ্রের নিতান্ত নিষ্প্রভ মুখচন্দ্রে দৃষ্টিযোজনা করিয়া রহিলেন। রামের নয়নযুগল হইতে, প্রবল বেগে, বাষ্পবারি বিগলিত হইতে লাগিল। তদ্দর্শনে তাঁহারাও, যৎপয়োনাস্তি শোকাভিভূত হইয়া, প্রভূত বাষ্পবারি বিমোচিত করিতে লাগিলেন। কিয়ৎ ক্ষণ পরে, লক্ষ্মণ, আর অপেক্ষা করিতে না পারিয়া, বিনয়পূর্ণ বচনে জিজ্ঞাসা করিলেন, আর্য্য, আপনকার এই অবস্থা দেখিয়া, আমরা ম্রিয়মাণ হইয়াছি। ভবদীয়, ভাব দর্শনে স্পষ্ট প্রতীয়মান হইতেছে, অবশ্যই কোনও অপ্রতিবিধেয় অনিষ্টসংঘটন হইয়াছে। গভীর জলধি, কখনও, অল্প কারণে আকুলিত হয় না; সামান্য বায়ুবেগের প্রভাবে, হিমাচল কদাচ বিচলিত হইতে পারে না। অতএব, কি কারণে, আপনি এরূপ কাতরভাবাপন্ন হইয়াছেন, তাহার সবিশেষ নির্দ্দেশ করি, আমাদের প্রাণরক্ষা করুন। আপনকার মুখারবিন্দ সায়ংকালের কমল অপেক্ষাও ম্লান, ও প্রভাতসময়ের শশধর