পাতা:সুকান্ত সমগ্র.djvu/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ছাত্রনেতা এবং আমাদের বন্ধু অন্নদাশঙ্কর ভট্টাচার্য। রাজনীতিতে শুকনো ভাব তখন অনেকখানি কেটে গিয়ে নাচ গান নাটক আবৃত্তির ভেতর দিয়ে বেশ একটা রসকষ এসেছে। কবিতাকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে আমাদের যেমন রাজনীতির আসরে ঢুকতে হয়েছিল, সুকান্তর বেলায় তা হয় নি। সুকান্তর সাহিত্যিক গুণগুলোকে আন্দোলনের কাজে লাগানের ব্যাপারে অন্নদারও যথেষ্ট হাতযশ ছিল। সুকান্তর আগের যুগের লোক ব’লে আমি পার্টিতে এসেছিলাম কবিতা ছেড়ে দিয়ে; আর সুকান্ত এসেছিল কবিতা নিয়ে। ফলে, কবিতাকে সে সহজেই রাজনীতির সঙ্গে মেলাতে পেরেছিল। তার ব্যক্তিত্বে কোনো দ্বিধা ছিল না।

 কিন্তু তার মানে এ নয় যে, আঠারো থেকে একুশ বছর বয়সে সুকান্ত যেভাবে লিখেছিল—বেঁচে থাকলে তিরিশ থেকে পয়ত্রিশ বছর বয়সেও সেই একই ভাবে লিখে যেত। সুকান্তকে আমি ছোট থেকে বড় হতে দেখেছি ব’লেই জানি, এক জায়গায় থেকে যাওয়া সুকান্তর পক্ষে অসম্ভব ছিল। ‘পূর্বাভাসে’ আর 'ঘুম নেই’তে অনেক তফাত। তেমনি সুস্পষ্ট তফাত 'ছাড়পত্রে’র প্রথম দিকের আর শেষ দিকের লেখায়।

 তাছাড়া কবিতা ছেড়ে সুকান্ত পরের জীবনে উপন্যাসে চলে যেত কিনা তাই বা কে বলতে পারে? বেঁচে থাকলে কী হত তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার আজ হয়ত কোনো মানে নেই, কিন্তু কাজে হাত দিয়েই সুকন্তকে চলে যেতে হয়েছে—এ কথা ভুলে গেলে সুকান্তর প্রতি অবিচার করা হবে।

 আমি আবার বলছি, 'সুকান্ত-সমগ্র’তে এমন অনেক লেখা আছে, যে লেখা হয়ত সুকান্তের সাজে না। সুকান্ত দীর্ঘজীবী হলে ছেলে বয়সের সে সব লেখা হয়ত তার বইতে স্থানও পেত না—আমার মতামত চাইলে আমিও ছাপাবার বিরুদ্ধে রায় দিতাম।

 কিন্তু সুকান্তর অকালমৃত্যু আমাদেরও হাত বেঁধে দিয়েছে। সুকান্ত বেঁচে থাকলে যে জোর খাটানো যেত, এখন আর সে জোর খাটানো চলে না। ওর ছেলেবেলার লেখায় খোদকারি করেছি, বড় হওয়ার পরেও ওর লেখা নিয়ে খুঁত খুঁঁত করেছি—এই বিশ্বাসে যে, আমরা যাই বলি না কেন মানা না মানার শেষ বিচার ওর হাতে।

 এখন সুকান্তর লেখা আর সুকান্তর নয়—দেশের এবং দশের। আমার কিংবা আর কারো একার বিচার সেখানে খাটবে না। কাজেই যে লেখা যেমন