পাতা:সুকান্ত সমগ্র.djvu/২৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 তুই আমাকে গ্রহ-বিচ্ছিন্ন উল্কার সঙ্গে তুলনা করেছিস-কিন্তু গ্রহটা কু-গ্রহ, যেহেতু তার আগ্রহ আমায় নিক্ষেপ করা কোনো এক প্রশংসা-মুখর ক্ষেত্রে। যাই হোক, তোর এই চিঠিটা যেন নতুন জন্মের আভাস দিয়ে গেল। এখন শোন, যে “আমার জীবনপাত্র উচ্ছলিয়া মাধুরী করছে দান” তার পরিচয়: এই পরিচয়পত্রের প্রারম্ভেই তোর কাছে ক্ষমা চাইছি, তোর কাছে একদিন ছলনার প্রয়োজন হয়েছিল বলে। কিন্তু আর নয়, এই জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে দাড়িয়ে আর কপটতার আশ্রয় নিলুম না এই জন্যই যে, কথাটা গোপন হলেও ব্যথাটা আর গোপন থাকতে চায় না, তোর কাছে—উলঙ্গ, উন্মুক্ত হয়ে পড়তে চায়। এ-ব্যাপারটা আমার প্রাণের সঙ্গে এমন অচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ যে, তোর কাছেও তা গোপন রাখতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আবেগের বেগে সংযমের কঠিনতা গলে তা পানীয়রূপে প্রস্তুত হল তোর কৌতুহলে। তুই এ-প্রেমে ফেনায়িত কাহিনী-সুধা কি পান করবি না?—এই সুরার মূল্য যে শুধু সহানুভূতি ও পরিপূর্ণ বিশ্বাস।

 কে তুই চিনিস,—যদি ‘না চিনি না’ বলিস তবে তাকে চিনিয়ে দিচ্ছি, সে উপক্রমণিকার অন্তরঙ্গ বন্ধু। সর্বোপরি সে আমার আবাল্যের সঙ্গিনী, সঙ্গিনী ঠিক নয়, বান্ধবী। যখন আমরা পরস্পরের সমুখে উলঙ্গ হতে দ্বিধা বোধ করতুম না, সেই সুদূর শৈশব হতে সে আমার সাথী। সব কিছু মনে পড়ে না, তবু এইটুকু মনে পড়ে যে, আমরা একত্র হলে আনন্দ পেতুম এবং সে আনন্দ ছিল নানারকমের কথা বলায়। একটা কথা বলে রাখা ভাল যে, আমাদের উভয়ের দেখা হত, কোনো কারণে প্রায়ই। সে আমায় শ্রদ্ধা করত এবং আমার সান্নিধ্যে খুশি হত। একবার আমাদের উভয়কেই... ...যেতে হয়, সেখানেই আমরা আরো অন্তরঙ্গ হয়ে পড়ি এবং আমি সেখানে থেকেই লাভ করি ওর সান্নিধ্যের আকর্ষণ। তখন আমার বয়স ১১,

২৮১
সমগ্র-১৭