পাতা:সুকান্ত সমগ্র.djvu/২৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 ও মাথা নিচু করলে, কিছুই বললে না। মনে হল ও যেন রীতিমত ঘামছে। সেদিন আমার জীবনের শুভদিন ছিল, প্রাণভরে সেদিন ওর কথা পান করেছিলাম। তারও মাস খানেক পরে এসেছিল শেষ শুভদিন—সেদিন আমাদের কলকাতার প্রায় মাইল খানেক পথ অতিক্রম করতে হয়েছিল। মোটরে করে আমরা উপক্রমণিকার বাড়িতে গিয়েছিলাম। ওর ইচ্ছা ছিল, আমার সঙ্গে ও সেদিন উপক্রমণিকার আলাপ করিয়ে দেবে। সৌভাগ্যবশত মোটরটা আমাদের সেখানে নামিয়েই ফিরে যায়। আর আমরাও ফিরতি পথে দুজনের সঙ্গ অনুভব করলুম। সেদিন নেশা লেগে গিয়েছিল ওর সঙ্গে চলতে, কথা বলতে। মনে করে দেখ, কলকাতার রাজপথে একজন সুন্দরী-সুবেশ মেয়ের পাশে-পাশে চলা কি কম সৌভাগ্যের কথা! ওর পাশে চলে, ওর এত কাছে থেকে, যে আনন্দ সেদিন আমি পেয়েছি, তা আমার বাকী জীবনের পাথেয় হয়ে থাকল। ও এখন বিমান আক্রমণের ভয়ে চলে গেছে সুদূর... ...তে। আর আমি তাই বিরহ-বিধুর হয়ে তোকে চিঠি লিখছি আর ভাবছি রবীন্দ্রনাথের দুটো লাইন,—

“কাছে যবে ছিল পাশে হল না যাওয়া
দূরে যবে গেল তারি লাগিল হাওয়া।”

 আমার দ্বিতীয় সমস্যা আরও ভয়ঙ্কর। যদি আমার আত্মীয়রা জানতে পারে এ কথা, তবে আমার লাঞ্ছনার অবধি থাকবে না। বিশেষত, আমার বিশ্বাসঘাতকতায়... ...নিশ্চয়ই আমার সংস্পর্শ ত্যাগ করবে। অতএব এখন আমার কি করা কর্তব্য চিঠি পাওয়া মাত্র জানাস।

ইতি—
সুকান্ত ভট্টাচার্য।
২৮৭