পাতা:সুকান্ত সমগ্র.djvu/৩০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আবিলতার কোনো আভাস পেলাম না। অথচ তাঁর মধ্যে সুরুচি ও সংস্কৃতির অভাব নেই, সর্বোপরি পরিপূর্ণতার এক গভীর নীরবতা গ্রাম্য আবেষ্টনীর মতো সর্বদা বিরাজমান। তবুও সেদিন সুস্থ হয়ে কথা বলতে পারি নি। যেহেতু আমি পুরুষ, তিনি নারী।

 এইবার আমার প্রেম-কাহিনীর শেষ অধ্যায় বিবৃত করছি। কিছুদিন আগে, কতদিন আগে তা মনে নেই—বোধহয় দু’মাস হবে, একদিন... ...কে... ...দের বাড়িতে নিয়ে যেতে হয়েছিল। পথে নেমে বহুক্ষণ চলতে থাকলুম গুনগুন করতে করতে, যতদূর মনে পড়ে ‘চাদ উঠেছিল গগনে'। প্রায় অর্ধেক রাস্তা সকৌতুকে আমাদের অবস্থা অনুভব করার পর ভাবলুম, আর নয়, ব্যাপারটাকে এইখানেই শেষ করে দেওয়া যাক। একটা দম নিয়ে জিজ্ঞাসা করলুম: একটা কথা বলব? প্রথমবার শুনতে পেল না। দ্বিতীয় বার বলতেই, মৃদু হেসে, ঔদ্ধত্যভরে, মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল। বললাম: কিছুদিন আগে আমার একখানা চিঠি পেয়েছিলে? ভ্রূকুটি হেনে ও বললে: কলকাতায়? আমি বললুম: না, বেনারসে। ও মাথা নেড়ে প্রাপ্তি সংবাদ জ্ঞাপন করল। আবার একটু দম নিয়ে বললাম: অত্যন্ত অসতর্ক অবস্থায়, আবেগের মাথায় পাগলামি করে ফেলেছিলাম। সেজন্য আমি এখন অনুতপ্ত এবং এইজন্যে আমি ক্ষমা চাইছি। ও তখন অত্যন্ত ধীরভাবে বিজ্ঞের মতো বললে—না-না, এজন্যে ক্ষমা চাইবার কিছু নেই, ঐ রকম মাঝে-মাঝে হয়ে থাকে। কিছুক্ষণ চুপচাপ চলবার পর জিজ্ঞাসা করলুম: আচ্ছা আমার চিঠিখানার জবাব দেওয়া কি খুব অসম্ভব ছিল? ও অত্যন্ত বিস্ময়ের সঙ্গে বললে: উত্তর তো আমি দিয়েছিলাম। আমি তখন অত্যস্ত ধীরে-ধীরে বললাম, চিঠিখানা তাহলে আমার বৌদির হস্তগত হয়েছে। ও বিষণ্ণ হেসে বললে: তাহলে তো বেশ মজাই হয়েছে। কিছুক্ষণ আবার নিঃশব্দে কাটল। তারপর ও হঠাৎ বললে: আচ্ছা এ রকম

২৯৫