পাতা:সুকান্ত সমগ্র.djvu/৩৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অনেকক্ষণ লণ্ঠনের আলোয় যশোদার ভালমানুষের মতো মুখখানা দেখল, আর রাগে তার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে লাগল। ইচ্ছা হল ছুটে গিয়ে একটি লাথিতে তাকে ধরাশায়ী করতে। কিন্তু সে-জিঘাংসা অতি কষ্টে সে দমন করল; কারণ সে জানে, তারই একজন অদৃশ্য সন্তান যশোদার দেহকে আশ্রয় করে আছে।

 নীলু ঘরে ঢুকল। নীলুকে দেখে যশোদা তিনুকে আঁচিয়ে নীলুর জন্যে জায়গা করে ভাত বাড়তে বসল। যশোদাকে ধরা পড়ে এই ভালমানুষী করতে দেখে প্রচণ্ড রাগের মধ্যেও নীলুর হাসি পেল। কিন্তু তবুও সে খেতে বসল, কারণ খাওয়া তার দরকার। ভাতে হাত দিয়েই সে তীক্ষ্ণ স্বরে প্রশ্ন করল: এ-চাল ছিল কোথায়?

 যশোদা সংক্ষেপে উত্তর দিল: আজকে বিকেলে তোমার দাদা দিয়েছেন। মুহূর্তে সব ওলট-পালট হয়ে গেল নীলুর মনের মধ্যে। কিছুক্ষণ যশোদার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞাসা করল: দিয়ে কী বললে? কতদিনের জন্যে চালটা ধার দিল সে-সম্বন্ধে কিছু বলেছে কি?

 অতর্কিতে যশোদার মুখ দিয়ে বেরিয়ে পড়ল: না, সে সম্বন্ধে কিছু বলে নি। শুধু বলেছে, যে-পুরুষমানুষ বৌ-বেটাকে খেতে দিতে পারে না তার গলায় দড়ি দেওয়া উচিত।

 যে-কথাটা যশোদা এতক্ষণ ধরে বলবে না বলে ভেবে রেখেছিল সেই কথাটা অসাবধানে বলে ফেলেই সে বিপুল আশঙ্কায় নীলুর মুখের দিকে তাকাল। সঙ্গে সঙ্গে নীলু হুংকার দিয়ে উঠল:

 —কী, আমাকে যে এতবড় অপমান করল তার দেওয়া চাল তুই আমাকে খাওয়াতে বসেছিস, হতভাগী? কে বলেছিল তোকে ঐ বড়লোকের দেওয়া চাল আনতে, এ্যাঁ? তুই আমার বৌ হয়ে কিনা ওর কাছে ভিক্ষে করতে গেছিলি? হারামজাদী, খা, তোর ভিক্ষে করে:আনা চাল তুই খা—

৩৫৮