পাতা:সুকান্ত সমগ্র.djvu/৩৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

শ্বাপদের মতো জ্বলে উঠে নিভে গেল। আকাশে শোনা গেল মৃদু গুঞ্জন-প্রহরী বিমানের নৈশ পরিক্রমা।


 আর হারু ঘোষ? শ্রান্ত, অবসন্ন হারু ঘোষের মনেও দেখা দিয়েছে বিপর্যয়। ক্ষুধিত হারু ঘোষ অন্ধকারে নিশাচরের মতো নিঃশব্দ পদচারণায় সারা উঠোনময় ঘুরে বেড়াতে লাগল। দেওয়ালে নিজের ছায়া দেখে থমকে দাঁড়ায়—তারপর আবার ঘুরতে থাকে। একে একে প্রত্যেক ঘরের আলো নিভে যায়, অন্ধকার নিবিড় হয়ে আসে, রাত গভীরতর হয়, তবু হারু ঘোষের পদচারণার বিরাম নেই। অনুশোচনায়, আত্মগ্লানিতে হারু ঘোষ ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, সমস্ত শরীরে অনুভব করতে থাকে কিসের যেন অশরীরী আবির্ভাব। অত্যন্ত ভীত, অত্যন্ত অসহায় ভাবে তাকায় আকাশের দিকে, সেখানে লক্ষ লক্ষ চোখে আকাশ ভর্ৎসনা জানায়—ক্ষমা নেই। হারু ঘোষ উন্মাদ হয়ে উঠল-আকাশ বলে ক্ষমা নেই, দেওয়ালের ছায়া বলে ক্ষমা নেই, তার হৃদস্পন্দন দ্রুতস্বরে ঘোষণা করতে থাকে ক্ষমা নেই। তার কানে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ স্বরে ধ্বনিত হতে থাকেক্ষমা নেই।•• •••

 ভোরের দিকে মোক্ষদা মাসি ফিরে এল হাসপাতাল থেকে। অত্যন্ত সন্তর্পণে ফিস ফিস করে হারু ঘোষ জিজ্ঞাসা করল—কী খবর?

 মোক্ষদা মাসির মতো মুখরাও মুক, মুহ্যমান—দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা নেড়ে জানালে, বেঁচে নেই। তারপর ধীরে ধীরে চলে গেল তার ঘরের দিকে।

 হারু ঘোষের সারা দেহে চাবুকের মতো চমকে উঠল আর্তনাদ; শরীর-মন এক সঙ্গে টলে উঠল, সমস্ত চেতনার ওপর দিয়ে বয়ে গেল অগ্নিময় প্লাবন। রাত শেষ হতে আর বেশী দেরী নেই। পাণ্ডুর আকাশের দিকে তাকিয়ে হারু ঘোষ নিজেও এবার অনুভব করল: ক্ষমা নেই।

৩৬২