কিশোরের স্বপ্ন৫
রবিবার দুপুরে রিলিফ কিচেনের কাজ সেরে ক্লান্ত হয়ে জয়দ্রথ বাড়ি ফিরে 'বাংলার কিশোর আন্দোলন’ বইটা হাতে নিয়ে শুয়ে পড়ল, পড়তে পড়তে ক্রমশ বইয়ের অক্ষরগুলো ঝাপসা হয়ে এল, আর সে ঘুমের সমুদ্রে ডুবে গেল।
চারিদিকে বিপুল ভীষণ অন্ধকার। সে-অন্ধকারে তার নিশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে আসতে লাগল, কিন্তু তা বেশীক্ষণ নয়, একটু পরেই জ্বলে উঠল সহস্র সহস্র শিখায় এক বিরাট চিতা; আর শোনা গেল লক্ষ লক্ষ কণ্ঠের আর্তনাদ-ভয়ে জয়দ্রথের হাত পা হিম হয়ে যাবার উপক্রম হতেই সে পিছনের দিকে প্রাণপণে ছুটতে লাগল—অসহ্য সে আর্তনাদ; আর সেই চিতার আগুনে তার নিজের হাত-পা-ও আর একটু হলে ঝলসে যাচ্ছিল।
আবার অন্ধকার। চারিদিকে মৃত্যুর মতো নিস্তব্ধতা। হঠাৎ সেই অন্ধকারে কে যেন তার পিঠে একটি শীর্ণ, শীতল হাত রাখল। জয়দ্রথ চমকে উঠল: ‘কে?'
তার সামনে দাড়িয়ে সারা দেহ শতচ্ছিন্ন কালো কাপড়ে ঢাকা একটি মেয়ে-মূর্তি। মেয়েটি একটু কেঁপে উঠল, তারপর ক্ষীণ, কাতর স্বরে গোঙাতে গোঙাতে বলল: আমাকে চিনতে পারছ না? তা পারবে কেন, আমার কি আর সেদিন আছে? তুমি আমার ছেলে হয়েও তাই আমার অবস্থা বুঝতে পারছ না দীর্ঘশ্বাস ফ্লেলে সে বললে: আমি তোমার দেশ!•••
বিস্ময়ে জয় আর একটু হলে মুর্ছ যেত: ‘তুমি?'
—হ্যাঁ, বিশ্বাস হচ্ছে না? ম্লান হাসে বাংলা দেশ।
—তোমার এ অবস্থা কেন? জয়ের দরদ মাখান কথায় ডুকরে কেঁদে উঠল বাংলা।
—খেতে পাই না বাবা, খেতে পাই না...