পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গুরুজির প্রস্থান । শিষ্যগণের শব্দসংহিতা পাঠ শ্রীশ্রীগুরু প্রসাদগুণে তত্ত্বদৃষ্টি লভি জগৎখানা ঠেকছে যেন শব্দে আঁকা ছবি শব্দ পিছে শব্দ জুড়ি চক্ৰে গাঁথি মায়া বাক্য ফিরে ছদ্মদেহে বিশ্ব তারি ছায়া চক্রমুখে মন্ত্ৰ ঠুকে বাঁধন কর টিলা শব্দ দিয়ে শব্দ কাটো, এই তো শব্দলীলা, যাহা স্বর্গ তাঁহা মর্ত্য তাঁহা পাতালপুরী সত্য মিথ্যা একই মতি খেলছে লুকোচুরি । ভালো মন্দ বিষম ধন্দ্ব কিছু না যায় বোঝা সহজ কথায় মোচড় দিয়ে বাকিয়ে করে সোজা । ভক্ত বলেন আদ্যিকালের শাদার নামই কালো আঁধার ঘন জমাট হলে তারেই বলে অালো ৷” শাস্ত্রে বলে সৃস্টি মূলে শব্দ ছিল আদি’ জগৎ স্রোতে জড়ের বাধন শব্দে রাখে বধি । বস্তুতত্ত্ব বদ্ধ মায়া সদ্য পরিহরি শব্দ চক্রে ঘোরে বিশ্ব সূক্ষ্ম দেহ ধরি । শব্দ ব্রহ্মা, শব্দ বিষ্ণু, শব্দ সরস্বতী বিশ্বযক্ত ধ্বংস শেষে শব্দে মাত্র গতি ৷ দ্বিতীয় দৃশ্য। স্বর্গ কাণ্ড গুরুজি । ঘনায়েছে কলিকাল ঘেরিয়া আঁধার জাল পাতিয়ে প্রলয় ফাদ কাল রাহ ধরে চাদ । ওই শোনো অতি দূরে সুদূর অসুর পুরে ভেদিয়া পাতাল তল ওই ওঠে ঢুকালাহল : ওই রে আঁধার কুঁড়ি ওই আসে গুড়ি-গুড়ি ঐ এল লাখে লাখ দলে-দলে বাকে-বাক ৷ গান সকলে । ওরে ভাই তোরে তাই কানে-কানে কইরে ঐ আসে ঐ আসে ঐ-ঐ-রে নিঝুম রাতে ফিসফাস, বাতাস ফেলে নিঃশ্বাস স্বপ্নে যেন খোজে কারে কৈ-কৈ-কৈ-রে ! আঁধার চলে চলাচল স্তৰধ দেহ রক্ত জল শৰদ নাচে হাড়ে-হাড়ে হৈ-হৈ-হৈ-রে । পাণ্ডু ছায়া অন্ধ হিম শূন্যে করে ঝিমঝিম ঐরে গেল গা ঘেষে আর তো আমি নই রে । মৰ্মকথা বলি শোন লাগল প্রাণে ‘কলিশন’ , প্রাণপণে হেকে বল মাভৈ-ভে-রে ॥ গুরুজি । দেবতা সবে গান্ধ তোলো স্বপ্নলীলা সাঙ্গ হল দেখ রে জেগে কাণ্ডটা কি স্বস্টি বাঁধন ড্রাঙল নাকি । মাষ্টক গুরুজি । কাকস্য পরিবেদনা ঈশান কোণে মেঘের পরে শব্দ তরল রক্ত ঝরে পাণ্ডু বরণ দখিনে বামে অন্ধ আঁধার শব্দ নামে। প্ৰলয় বাদল রক্ত রাঙা পাগল জেগেয়ে আগলে ভাঙা উল্কা ঝলকে বিজলী ছোটে গহন শূন্য শিহরি ওঠে । তুহিন তিমির ধরণী গায় সভয় পবন থমকি চায় হরষে পিশাচী পিশাচে কয় রক্ত মড়ক জগৎময় ॥ হে অলক্ষ্মী একি খেলা অনাহত হেন বেলা নৃত্য তোমার এমনি ধারা সৃটিছাড়া ছন্দোহারা । অনাদৃতে হুহুঙ্কময়ী খেয়াল তব সর্বজয়ী-- কহ আজি কেন স্কন্ধে, চাপিলে নাছোড়বন্দে । কেন ঠাট্টা সর্বনাশী, কেন অট্ট আঁধার হাসি, কেন আজি ঘুমটি ভাঙাও অকারণে চক্ষ রাঙাও ? গান কেন-কেন কেনরে কেন-কেন ? চেচিয়ে কাচা ঘুম ভাঙ কেন ? পটকা শবদ আৰ্ট রোল, শঙ্খ ঘণ্টা চক্ক ঢোল স্বৰ্গপুরী হদ হইল বাদ্যভাণ্ড হট্টগোল । দেবতা বিলকুল কাব্দে গো তল্পিতল্পা বান্ধে গো পাগলা রাহু একলা তেড়ে গিলতে চাহে চান্দে গো । আগডুম বাগডুম শব্দ ছায় চিত্ত গুড়গুড় দপদপায় দন্ত কড়কড়, হাডিড মড়মড়, প্রাণটা ধড়ফড় সর্বদাই ॥ বৎসগণ আর কেঁদ না, গতস্য শোচনা নাস্তি যথা কর্ম তথা শাস্তি । মিথ্যা এত কান্না কেন অলমতি বিস্তারেণ ? অত্র এখন দেবতা সভায় ঠাণ্ডা হয়ে বসেছে সবাই তোমরা একটু ক্ষান্ত হও শান্ত হয়ে মন্ত্র কও ৷ রহস্পতির স্তোন্ত্রপাঠ এ ভব সঙ্কট অর্ণব মস্থনে মাকুর সংহার মাকুর সংহার মাকুর সংহার মাকুর হে হে শুরু গল্পতি অস্টম দিকপতি হে গুরু রক্ষ হে গুরু রক্ষ হে শুরু হে ॥ বৃহস্পতির আবির্ভাব বৃহস্পতি । মাকুর কোলাহল ভো তো শিষ্য হে দরজাটুকু ছেড়ে বস আজকে বড় গ্রীষ্ম হে, আসনটাকে নাড়িও না বস না কেউ সোফাতে । তোমার গায়ে গন্ধ বড় সরে দাড়াও তফাতে । কি বলছিলে বলে ফেল নেইকো আমার চাকর-বাকর । সময় কেন নস্ট কর করে মেলা বকর-বকর ? কারুর বাড়ি যোগ্যি নাকি বংশ প্রথা চিরন্তন ? তোমার বুঝি ছেলের ভাতে ফলার ভোজে নিমন্ত্রণ ? তোমার বুঝি মেয়ের বিয়ে—আটকে ছিল অনেক দিন ? যা হোক এবার উতরে গেল রয়ে সয়ে বছর তিন ॥ 80%