পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গুরুজি। হ্যা। তোমরা স্বপ্নে যা দেখেছ তা যথার্থই বটে।

শব্দই আলোক! শব্দই বিশ্ব শব্দই সৃজ্টি শব্দই সব! আর দেখ, সৃষ্টির আদিতে এক অনাহত শব্দ ছিল, আর কিছুই ছিল না। দেখ, প্রলয়ের শেষে যখন আর কিছু থাকবে না-_ তখনো শব্দ থাকবে। এই যে শব্দ, এ সেই শব্দ। যাদবন্তন্র দিবাকর, যে শব্দের আর অন্ত নেই, মানুষ ঘার্টে-ঘাটে ধাপে- ধাপে যগের পর যুগ প্রশ্ন করতে করতে যার কিনারা গায়নি_ সেই শব্দের তুমি নাগাল পেয়েছ। একে বলে অন্তুষ্টি। দেখ শব্দকে তোমরা তাচ্ছিল্য কোরো না_এই শব্দকে চিনতে পারেনি বলেই, এই আমি আসবার আগে, যে যা কিছু করতে চেয়েছে সব ব্যর্থ হয়ে গেছে। এই বথা্ুকু বলবার জনই আমি এতদিন দেহ ধারণ করে রয়েছি।

বিশ্বস্তর। হ্যা-হযা, ঠিক বলেছেন । আমার মনের কথাটা টেনে বলেছেন। এ সংসার মায়াময়-_সবই অনিত্য--দারা-পু- পরিবার তুমি কার কে তোমার | সব দুদিন আছে দুদিন নেই। বুঝলেন কিনা? আমি ছেলেবেলায় একটা পদ্য লিখেছিধু ম, শুনবেন? কিনা?

[ বিশ্বস্তরের আবৃত্তি ] ভব গাদ্থ বাসে এসে কেদে-কেঁদে হেসে-হেসে ভুগে-ডুগে কেশে-কেশে, দেশে-দেশে ডেসে-তেসে কাছে এসে ঘেঁষে-ঘেঁষে এত ডালো বেসে-বেসে

টাকা মেরে পালালি শেষে।

গুরুজি। বেদ বল, পুরাণ বল স্মৃতি বল, শাস্র বল, এ সব কি? কতগুলো বাক, অর্থাৎ কতকগুলো শব্দ_এই তো £ এই যেসব শশ্ম-ঘণ্টা, মন্ত্র ্রীং-র্লীং ঝাড়-ফূ'ক নাম-জ্রপ এসব কি? একি শব্দ নয়? সৃষ্টির গোড়াতে প্রাণ কারণ, আকাশ সব মিলে যখন হব-হব কচ্ছিল, তখন যদি 'ওম' শব্দ করে প্রণব ধ্বনি না হত, তবে কি সৃড্টি হতে পারত ? শব্দে সৃষ্টি, শব্দে স্থিতি, শব্দে প্রলয়। বেশি কথায় কাজ কি? বিষ্ণুর হাতে শস্ম কেন? শিবের মুখে বিষাণ কেন £ হাতে তার ডমরু কেন? নারদ যখন স্বর্গে যায়, চলতে-চলতে বীণা বাজায় কেন? এসব কি শব্দ নন? আর অনাদিকাল হতে যে অনাহত শব্দ যোগীদের ধ্যান-কর্ণে ধ্বনিত হয়ে আসছে সে কি শব্দ নয়? তার সেই কাজিন্দীর কুলে যমুনার তীরে শ্যামের যে বাশরী বেজোইল, সেও কি শব্দ নয়? এমনি করে ভেবে দেখ, যা ভাববে তাই শব্দ__ শাস্ত্রে বলেছে "শব্দ ব্রদ্ধা-_

বিশ্বস্তর। আমাদের মতিলাল সেবার ভূই পটকা বানিয়ে- ছিল, উঃ-তার যে শব্দ! আমি ও বিষয়ে একটা কবিতা লিখেছি শুনবেন?

হরেকানন্দ। দেখ গুরুজির সামনে এরকম বেয়াদবি, এট- কি ভালো হচ্ছে?

বিশ্বস্তর। ভালো রে ভালো | ইনি বলছেন স্বপ্ন কথা-_

উনি তাঁর প্রশ্ন হাকছেন, এ-ও ফোড়ন দিচ্ছে_-3-ও ফোড়ম দিচ্ছে_-আর আমি-কথা,কইলেই যত দোষ ? বেহারী।: আহা, গুরুজি আছেন. যে, তাঁকে ডিডিয়ে কথা বলবে? বিশ্বস্তর। ওরুঞির ন্যাজ ধরে-ধরেই যে ঘুরতে হবে তার মানে কি? জগাই। নাজ বলেছে! গুরুজির নাজ বলেছে! গটলা। তুই থাম না, তোর ন্যাজ তো বলেমি__ গুরুজি। ওরে হতভাগা, শব্দ নিয়ে তোরা ছেলেখেলা করিস- শব্দ যে কি জিনিস আজও তোরা বুঝলিনে। কিন্তু এখন বুঝবার সময় হয়েছে। এই নাও আমার শব্দসংহিতা এইটে এখন পড়ে নাও। ওর মধো আমি দেখিয়েছি এই যে--এক-একটি শব্দ এক-একটি চণ্র, কেননা শব্দ তার নিজের অর্থের মধ্যে আবদ্ধ থেকে ঘুরে ঘুরে বেড়ায়। তাই কথা বলা হয়েছে অর্থই শব্দের বন্ধন। এই অর্থের বন্ধনটিকে ডেঙে চক্রের মুখ হদি খুলে দাও, তবেই সে মুক্তগতি স্পাইরাল মোশান হয়ে কুণলীর্রমে উর্ধ্বমুখে উঠতে থাকে । অর্থের চাগ তখন থাকে না কিনা। যে সঙ্কেত জানে সে এ কুণ্ডলীর সাহায্যে করতে না পারে এমম কাজই নেই। তাই বলছি তোমরা প্রস্তুত হও-_অমাবসযার অন্ধকার রান্তিরে সেই সঙ্কেত মন্ত্র দিয়ে তোমাদের দেখাব শব্দের কি শক্তি! রাতারাতি-স্গ বরাবর গৌছেং দেবে। গথ-গথ করে সব ঘুরে বেড়ায়__কিন্তু শব্দ ছাড়া আর দ্বিতীয় পথ নেই। [ শিষাগণের উচ্ছাস গদগদভাব ] [গান-_ধূম কীর্তন ] তাই ফিরি তুমি আমি ধাঁধায় দিবস যামী তাই ফিরে মহাজন গথে-পথে অনুখন অন্ধ আঁধারে মরে নামি। নিজ্ব বেগে নিজ তালে শব্দ ফিরে দেশে কালে আগনি গথিক পথ চালায় আপন রথ ভুবন ঘেরিল গথ জালে। প্রাণে-প্রাণে একে বেকে পথ যায়-হেঁকে-হেঁকে আপনি পথিক গথ চালায় আপন রথ সেই পথে চল আগে থেকে ॥ ওরুজি। পূর্বে-পূ্বে খষিরা এই শব্দমার্গকে ধরে-ধরেও ধরতে পারেনি। কেন? এ যে সনেস্সি অমাবস্যার অন্ধকার রাস্তিরে ঘড়ঘড় করে নাক ডাকছিল, কেন ডাকছিল ? শব্দমার্গের সন্ধান পেয়েছে কিন্তু তার সঙ্কেতটুকু ধরতে পারেনি । ওরা যে ধরেছে সে সব শব্দের অর্থ নেই এবং ছিল না-_চৌড়া শব্দ । তা করলে তো চলবে না। জ্যান্ত-জাস্ত শব্দ, যাদের চলহশক্তি চাপা রয়েছে, ধরে-ধরে মটমট করে তাদের বিষর্দাত ভাঙতে হবে। অর্থের বিষ জমে-জমেউঠতে থাকবে_-আর ঘ্যাচ-ঘ্যাচ করে তাকে কেটে ফেলবে। এইজন্যে তোমাদের এ শব্দসংহিতাথানা গড়ে

“রাখতে বলছি |

সুকুমার সমগ্র ননাবামী। ২