পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-প্রথম খণ্ড.djvu/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

যখন সে তাকাল তখন দেখল, ঝড় নেই আঁধার নেই, সেই ছোট্ট শিশুটিও নেই—আছেন শুধু এক মহাপুরুষ, মাথায় তাঁর আলোর মুকুট। তিনি বললেন, “আমি ক্রুশের মানুষ—আমিই আজ তোমায় ডাক দিয়েছি। এতদিন এত লোক পার করেছ, আজ আমায় পার করতে গিয়ে নিজেও পার হলে, আর তারি সঙ্গে শয়তানের পাপের বোঝা কত যে পার করেছ তা তুমিও জান না। আজ হতে তোমার অফেরো নাম ঘুচল; এখন তুমি সেণ্ট ক্রিষ্টোপার—সাধু খৃষ্ট বাহন! যাও, স্বর্গের যাঁরা শ্রেষ্ঠ সাধু, তাঁদের মনে তুমি আনন্দে বাস কর।”

সন্দেশ-১৩২৩


নাপিত পণ্ডিত

 বাগদাদ শহরে এক ধনীর ছেলে প্রতিজ্ঞা করিয়া বসিল, সে কাজির মেয়েকে বিবাহ করিবে। কিন্তু প্রতিজ্ঞা করা যত সহজ, কাজটা তত সহজ নয়। সুতরাং কিছুদিন চেষ্টা করিয়াই সে বেচারা একেবারে হতাশ হইয়া পড়িল। দিনে আহার নাই, রাত্রে নিদ্রা নাই—তার কেবলই ঐ এক চিন্তা—কি করিয়া কাজির মেয়েকে বিবাহ করা যায়।

 বিবাহের সব চাইতে বড় বাধা কাজিসাহেব স্বয়ং। সকলেই বলে, “বাপু হে! কাজিসাহেব এ স্পর্ধার কথা জানতে পারলে তোমার একটি হাড় আস্ত রাখবেন না।” বেচারা কী করে? ক্রমাগত ভাবিয়া-চিন্তিয়া সে রীতিমত জ্বর আনিয়া ফেলিল—বন্ধু-বান্ধব বলিতে লাগিল, “ছোকরা বাঁচলে হয়।” ইহার মধ্যে হঠাৎ একদিন এক বুড়ি আসিয়া খবর দিল, বিবাহের সমস্তই ঠিক। কাজিসাহেবকে না জানাইয়াই এখন চুপচাপ বিবাহটা হইয়া যাক—তারপর সুবিধামত তাঁহাকে খবর দেওয়া যাইবে; তখন তিনি গোল করিয়া করিবেন কি? সে আরো বলিল, “শুক্রবার সন্ধ্যার সময় কাজিসাহেব বাড়ি থাকবেন না—সেই সময় বিয়েটা সেরে ফেল কিন্তু খবরদার! কাজিসাহেব যেন এ-সব কথার বিন্দুমাত্র জানতে না পারেন।”

 শুক্রবার দিন ভোর না হইতে বর বেচারা হাত-মুখ ধুইয়া প্রস্তুত, সন্ধ্যা পর্যন্ত তাহার আর সবুর সয় না। দুপুর না হইতেই সে চাকরকে বলিল, “একটা নাপিত ডেকে আন্‌। এখন থেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে থাকি।” চাকর তাড়াতাড়ি কোথা হইতে এক নাপিত আনিয়া হাজির করিল।

 নাপিত আসিয়াই বরকে বলিল, “আপনাকে বড় কাহিল দেখছি— যদি অনুমতি করেন তো ছুরি দিয়ে বাঁ হাতের একটুখানি রক্ত ছাড়িয়ে দেই—তা হলেই সমস্ত শরীরটা ঠাণ্ডা বোধ করবেন।” বর বলিল, “না হে, তোমাকে চিকিৎসার জন্য ডাকি নাই—আমার দাড়িটা একটু চট্‌পট্‌ কামিয়ে দাও দেখি।” নাপিত তখন তাহার সরঞ্জামের থলি খুলিয়া অনেকগুলা ক্ষুর বাহির করিল, তারপর প্রত্যেকটা ক্ষুর হাতে লইয়া বার বার পরীক্ষা করিতে লাগিল। এইরূপে অনেক সময় নষ্ট করিয়া

দেশ-বিদেশের গল্প
৯৯