পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-প্রথম খণ্ড.djvu/১১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অমন যা তা বলে।” সুলতান বললেন—“পাকড়াও দেখি—ওটাকে পাগলা গারদে রেখে দেওয়া যাবে।” বলতেই সুলতানের লোকেরা তাকে ধরে বন্দী করে ফেলল।

 সকলে বাড়ি পৌঁছাতেই তো সুলতানা ছটে এলেন, কিন্তু দরজিকে দেখেই তিনি কাঁদ কাঁদ হয়ে বললেন, “এ তো আমার ছেলে নয়! তার তো এরকম চেহারা ছিল না!” সুলতান বললেন, “আরে! কচিছেলের মুখ কি আর তেমনিই থাকে? বড় হয়ে চেহারা বদলিয়ে গেছে।” সুলতানা বললেন, “না, না, আমি কতবার আমার ছেলের মুখ স্বপ্নে দেখেছি, সে মুখ মোটেই এরকম নয়।” এমন সময় ওমার হঠাৎ প্রহরীদের হাত ছাড়িয়ে এসে একেবারে সুলতানার পায়ে পড়ে বলল, “আমিই আপনার ছেলে, ও লোকটা জোচ্চোর।” তাকে দেখেই সুলতানা চেঁচিয়ে উঠলেন, “ওগো, এই তো আমার ছেলে—একেই আমি স্বপ্নে দেখেছি।” তখন সুলতানের ভারি রাগ হল—তিনি ওমারকে ধরে তখনই পাগলা গারদে রাখতে হুকুম দিলেন।

 সলতানা আর কি করেন? তিনি ঘরে বসে খাওয়া দাওয়া ছেড়ে রাতদিন কাঁদতে লাগলেন। কাঁদতে কাঁদতে হঠাৎ তাঁর মাথায় এক বুদ্ধি জোগাল। তিনি সুলতানকে গিয়ে বললেন, “আমার একটা সখ হয়েছে যে তোমার ছেলেকে আর ঐ পাগলা দরজিকে দুটো ওড়না বুনতে দেব—যারটা ভালো হবে, সেইটা আমার জন্মদিনে গায়ে দেব।” সুলতান বললেন, “সে তো বেশ কথা।” তারপর দরজি আর ওমার দুজনকেই ছুঁচ, সুতো, জরি, রেশম, এই-সব দিয়ে সুলতানা বললেন, “আমাকে সুন্দর একখানা ওড়না বানিয়ে দিতে হবে।”

 দরজির ছেলে ভাবল, ‘সুলতানা আমার ওপর চটে আছেন—এইবার তাঁকে খুশি করে দিতে হবে।’ তাই সে খুব যত্ন করে, সোনালি, রুপোলি ফুল, পাতা এঁকে চমৎকার একটি ওড়না বানাল। তাই দেখে সুলতানা বললেন, “বাছা, তোমার হাতের সেলাই তো বড় চমৎকার! একেবারে ওস্তাদ দরজির মতো! এমন সেলাই কোত্থেকে শিখলে বল দেখি?” তখন দরজি ভারি থতমত খেয়ে গেল।

 তারপর দুজনে ওমারের ঘরে গিয়ে দেখলেন যে সে বেচারা চুপ করে বসে আছে। সুলতানা বললেন, “আমার ওড়না কই?” ওমার মুখ ফুলিয়ে বলল, “আমি তলোয়ার চালাতেই শিখেছি, ছুঁচ চালাতে তো জানি না।” সুলতানের মনে তখন ভারি খটকা লাগল।

 সে দেশে এক আদ্যিকালের বুড়ি ছিল, লোকে বলত যে সে জাদু জানে। সুলতান অনেক ভেবে কিছু ঠিক করতে না পেরে, সেই বুড়ি জাদুকরীকে গিয়ে সব বললেন। বুড়ি তাঁকে দুটো কৌটো দিয়ে বলল, “আপনি বাড়ি গিয়ে ওদের দুজনকে বলুন এর মধ্যে একটা কৌটো পছন্দ করে নিতে। যে যা পছন্দ করবে, তাতেই বোঝা যাবে কে আপনার ছেলে।”

 কৌটো দুটি ভারি সুন্দর—দেখতে দুটোই একরকম: কিন্তু একটার ওপর লেখা আছে “টাকার সখে” আরেকটাতে লেখা আছে “বীরত্বের সম্মান”! সুলতান আর সুলতানা দরজির ছেলেকে ডেকে বললেন, “এর মধ্যে তোমার কোন্‌টি পছন্দ হয় বলতো?” দরজি অমনি খপ করে “টাকার সুখ” লেখা কৌটোটি ধরল। কিন্তু ওমার এসে “বীরত্বের সম্মান” লেখা কৌটোটি পছন্দ করল। সুলতান বললেন, “আচ্ছা নিজের নিজের কৌটো নিয়ে যাও।” যেই কৌটো দুটো হাতে নেওয়া অমনি ফট করে তার ঢাকনা খুলে গেল। ওমারের কৌটোর মধ্যে ছোট্ট সুন্দর একটি মুকুট আর

সু. স. র.—১৪
১০৫