জানি ভাই! আজকাল কি-সব ভূতের কাণ্ড হচ্ছে, কিছু বুঝবার জো নেই। এই দেখ না সেদিন আমার সোনার মোহরগুলো খামখা বদলে সব তামার পয়সা হয়ে গেল। অদ্ভুত ব্যাপার!”
তখন সওদাগর রেগে বন্ধুকে গালাগালি দিয়ে কাজির কাছে দৌড়ে গেল নালিশ করতে। কাজির হুকুমে চার-চার প্যায়দা এসে মহাজনকে পাকড়াও করে কাজির সামনে হাজির করল। কাজি বললেন, “তুমি এর ছেলেকে নিয়ে কি করেছ?” শুনে চোখ দুটো গোল করে মস্ত বড় হাঁ করে মহাজন বলল, “আমি? আমি মুখ্যসুখ্যু মানুষ আমি কি অত সব বুঝতে পারি? হুজুর! ওর বাড়িতে মোহর রাখলাম, দশদিনে সব পয়সা হয়ে গেল। আবার দেখন ওর ছেলেটা আমার বাড়ি আসতে না আসতেই ল্যাজ-টাজ গজিয়ে দস্তুরমত বাঁদর হয়ে উঠেছে। কিরকম যে হচ্ছে—আমার বোধ হয় সব ভূতুড়ে কাণ্ড।” এই ব’লে সে কাজিকে লম্বা সেলাম করতে লাগল।
কাজিও চালাক লোক, ব্যাপার বুঝতে তাঁর বাকি রইল না। তিনি বললেন, “আচ্ছা, তোমরা ঘরে যাও। আমি দৈবজ্ঞ ফকির ডাকিয়ে মন্ত্র পড়ে ভূত ঝাড়িয়ে সব সায়েস্তা করছি। তোমার পয়সার থলি ওর কাছে দাও—আর তোমার বাঁদর ছেলেকে এর কাছেই রাখ। কাল সকালের মধ্যে সব যদি ঠিক না হয় তবে বুঝব এতে তোমাদের কারুর শয়তানি আছে। সাবধান! তা হলে তোমার পয়সাও পাবে না, মোহরও পাবে না—আর তোমার ছেলে তো মরবেই, ছেলের বাপ মা খুড়ো জ্যাঠা সবসুদ্ধ মেরে সাবাড় করব।”
সওদাগর পয়সার থলি সঙ্গে নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঘরে চলল। মহাজন বাঁদর নিয়ে হাসতে হাসতে বাড়ি ফিরল। ভোর না হতেই সওদাগর থলির মধ্যে আবার মোহর ভরে মহাজনের বাড়ি গিয়ে বলছে, “বন্ধু! বন্ধু! কি আশ্চর্য দেখে যাও! তোমার পয়সাগলো আবার সব মোহর হয়েছে।” মহাজন বলল, “তাই নাকি? কি আশ্চর্য এদিকে সেই বাঁদরটাও তোমার খোকা হয়ে গেছে।”
তারপর মোহরের থলি নিয়ে সওদাগরের ছেলেটাকে ফিরিয়ে দিয়ে মহাজন বলল, “দেখ জোচ্চোর! ফের আমায় ‘বন্ধু বন্ধু’ বলবি তো মেরে তোর থোঁতা মুখ ভোঁতা ক’রে দেব।”
বুদ্ধিমান শিষ্য
এক মুনি, তাঁর অনেক শিষ্য। মুনিঠাকুর তাঁর পিতৃশ্রাদ্ধে এক মস্ত যজ্ঞের আয়োজন করলেন। সে যজ্ঞ এর আগে মুনির আশ্রমে আর হয় নি। তাই তিনি শিষ্যদের ডেকে বললেন, “আমি এক যজ্ঞের আয়োজন করেছি, সে যজ্ঞ তোমরা হয়তো আর কোথাও দেখবার সুযোগ পাবে না, কাজেই যজ্ঞের সব কাজ-কর্ম বিধি-ব্যবস্থা বেশ মন দিয়ে দেখো। নিজের চোখে সব ভালো করে না দেখলে শুধু পুঁথি পড়ে এ যজ্ঞ করা সম্ভব হবে না।”