বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-প্রথম খণ্ড.djvu/১৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দেয়ে ফিরে আসতেই গুরু বললেন, “কি করে এলে?” শিষ্য বললে, “দুধ দিয়ে, দৈ দিয়ে গুড় মেখে খেলাম।” গুরু বললেন, “বেশ করেছ। বলতো, দৈ দুধ কিরকম?” শিষ্য এক গাল হেসে বলল, “আজ্ঞে, ঠিক যেন লাঙ্গলের ঈষ্‌।”

 গুরুর তো চক্ষুস্থির! তিনি বললেন, “ও মূর্খ! এই বুঝি তোর বিদ্যে! আমি ভাবছি যে তুই বুঝি বুদ্ধি খাটিয়ে সব জবাব দিচ্ছিস। তুই লাঙ্গলও দেখেছিস, দুধ দৈও খেয়েছিস, তবে কোন আক্কেলে বললি যে লাঙ্গলের ঈষের মতো? দূর্‌ দূর্‌ দূর্‌! কোনদিন তোর কিচ্ছ হবে না।”

 শিষ্য বেচারা হঠাৎ এমন তাড়া খেয়ে একেবারেই দমে গেল। সে মনে মনে বলতে লাগল, ‘এদের কিছুই বোঝা গেল না। ঐ কথাটাই তো কদিন ধরে বলে আসছি, শুনে গুরু রোজই তো খুশি হয়। তাহলে আজকে কেন বলছে ‘দূর দূর’। দুত্তারি। এদের কথার কিছু ঠিক নেই।’

সন্দেশ—১৩২৬


ঠুকে মারি আর মুখে মারি

 মুখে-মারি পালোয়ানের বেজায় নাম—তার মতো পালোয়ান নাকি আর নাই। ঠুকে-মারি সত্যিকারের মস্ত পালোয়ান, মুখে-মারির নাম শনে সে হিংসায় আর বাঁচে না। শেষে একদিন ঠুকে-মারি আর থাকতে না পেরে, কম্বলে নব্বই মণ আটা বেঁধে নিয়ে, সেই কম্বল কাঁধে ফেলে মুখে মারির বাড়ি রওয়ানা হলো।

 পথে এক জায়গায় বড্ড পিপাসা তার খিদে পাওয়ায় ঠুকে-মারি কম্বলটা কাঁধ থেকে নামিয়ে একটা ডোবার ধারে বিশ্রাম করতে বসল। তারপর চোঁ চোঁ করে এক বিষম লম্বা চুমক দিয়ে ডোবার অর্ধেক জল খেয়ে বাকি অর্ধেকটায় সেই আটা মেখে নিয়ে সেটাও সে খেয়ে ফৈলল। শেষে মাটিতে শুয়ে নাক ডাকিয়ে ঘুম দিল।

 সেই ডোবাতে একটা হাতি রোজ জল খেতে আসত! সেদিনও সে জল খেতে এল; কিন্তু ডোবা খালি দেখে তার ভারি রাগ হলো। পাশেই একটা মানুষ শময়ে আছে দেখে সে তার মাথায় দিল গোদা পায়ের এক লাথি। ঠুকে-মারি বলল, “ওরে, মাথা টিপেই দিবি যদি, একটু ভালো করে দেনা বাপু!” হাতির তখন আরো বেশি রাগ হল। সে শুঁড়ে করে ঠুকে-মারিকে তুলে আছাড় মারতে চেয়েছিল, কিন্তু তার আগেই ঠুকে-মারি তড়াক করে লাফিয়ে উঠে হাতিমশাইকে থলের মধ্যে পরে রওয়ানা হ’ল।

 খানিক দূরে গিয়ে সে মুখে-মারির বাড়িতে এসে হাজির হ’ল আর বাইরে থেকে চেঁচাতে লাগল, “কই হে মুখে-মারি। ভারি নাকি পালোয়ান তুমি! সাহস থাকে তো লড় না এসে!” শনে মুখে-মারি তাড়াতাড়ি বাড়ির পিছনে এক জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে পড়ল। মুখে মারির বৌ বলল, “কর্তা আজ বাড়ি নেই। কোথায় যেন পাহাড় ঠেলতে গিয়েছেন।” ঠুকে-মারি বলল, “এটা তাকে দিয়ে ব’লো যে এই

সু. স. র.—১৮
১৩৭