বাড়িতে দুটো সুন্দর কুয়ো হ’ল।
চাষার এত হিংসা হল যে তার আর রাত্রে ঘুমই হল না। সে কেবল ভাবতে লাগল কি করে দুষ্টু লোকটাকে জব্দ করবে। ভাবতে ভাবতে তার মাথায় একটা বুদ্ধি জোগাল। সে শঙ্খের কাছে চাইল, “আমার একটা চোখ কানা ক’রে দাও!”
অমনি তার একটা চোখ কানা হয়ে গেল, আর সেই দুষ্টু লোকটা একেবারে অন্ধ হয়ে গেল। অন্ধ হয়ে যেই সে ঘর থেকে বেরোবে, অমনি সে দুটো কুয়োর একটার মধ্যে পড়ে গেল, আর হাবুডুবু খেয়ে ডুবে মরল।
অতি গরিব এক অন্ধ। তার ভারি দুঃখ—তার ঘরবাড়ি নাই, টাকা পয়সা নাই, ছেলেপিলে নাই, আর সে চোখে দেখতে পায় না। মনের দুঃখে অনেক কষ্টে তার দিন কাটে।
একদিন স্বর্গ থেকে দেবদূত এসে বললেন, “ওরে অন্ধ, তুই আর কাঁদিস নে, আমি তোকে বর দিতে এসেছি। তুই কি বর চাস আমায় বল। একটিমাত্র বর তুই পাবি, সুতরাং ভালো করে ভেবেচিন্তে বলিস।”
অন্ধ কি বর চাইবে ভেবেই পায় না। একবার বলতে চায়, আমার চোখে দৃষ্টি এনে দাও—আবার ভাবে, শুধু দৃষ্টি দিয়ে করব কি, বলি টাকাপয়সা দাও কিংবা ঘরবাড়ি দাও। আবার তার মনে হয়, টাকাপয়সা, ঘরবাড়িই-বা কার জন্যে চাই—আমার ছেলেপিলে কেউ নাই। আর দু'দিন বাদেই যদি মরে যাই তাহলে এ-সব চেয়েই-বা লাভ কি? আর সব পেয়েও যদি মনের সুখটুকু না পাই, তাহলে তো সবই বৃথা।
তার ভাবনা দেখে দেবদূত বললেন, “আচ্ছা, তুই এখন না বলতে পারিস, নাহয় আমি কাল আবার আসব, তখন বলিস। এর মধ্যে ভালো করে ভেবে রাখ।”
অন্ধ বেচারার আর সারারাত ঘুমই হল না। ভোরবেলা দেবদূত আবার ফিরে এসে বললেন, “আমি এসেছি—এখন কি বর চাস বল।”
তখন অন্ধের বুদ্ধিটা হঠাৎ কেমন খুলে গেল। সে লাফিয়ে উঠে বলল, “আমায় খালি এই বর দিন যে আমি যেন হাসতে হাসতে দেখে যেতে পারি যে আমার নাতি-নাতনিরা চৌতলা বাড়িতে সোনার পালঙ্কে বসে আমার চারিদিকে খেলা করছে।”
দেবদূত তার বর চাওয়ার বাহাদুরি দেখে হেসে বললেন, “আচ্ছা তাই হোক।”
এক বরে অন্ধের ছেলেপিলে, ঘরবাড়ি, টাকাপয়সা, চোখের দৃষ্টি, অনেক বয়স আর মনের সুখ, সবই চেয়ে নেওয়া হল।