পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-প্রথম খণ্ড.djvu/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তাঁর সুচিন্তিত মতামত প্রকাশিত হচ্ছে।

 এই সময়ে তিনি কেবল ফোটোগ্রাফির কাজেই ডুবে থাকেন নি, ইংলণ্ডের সাহিত্য-সংস্কৃতি-সংগীতের জগতে দৃশ্যশ্রাব্য যা কিছু পেয়েছেন উপভোগ করে নিজের অভিজ্ঞতা ও রসবোধকে বিস্তারিত করেছেন, প্রবাসী ভারতীয়দের সঙ্গে মিশে গেছেন এবং ওদেশের লোকেদের সামনে ভারতের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন। লণ্ডনে ভারতীয় ছাত্রদের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক ডাঃ পি. কে. রায়ের বাড়িতে প্রায়ই যেতেন। সেখানে যে-সব বাঙালিদের সঙ্গে মেলামেশা হতো তাঁদের মধ্যে ছিলেন সতীশ মুখার্জি ও তাঁর স্ত্রী, স্যর কে. জি. গুপ্ত, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, সরোজিনী নাইডু ও তাঁর ছোট বোন মৃণালিনী চ্যাটার্জি, এবং পুরোনো বন্ধুদের মধ্যে ছিলেন ডাক্তার দেবেন বসু, কেদারনাথ চট্টোপাধ্যায়, প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ প্রভৃতি।

 ডাঃ পি.কে. রায়ের স্ত্রী কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে টাকা তুলতে ভারতীয় দেবদেবীদের নিয়ে একটা ‘ট্যাব্লো’ করেছিলেন। সুকুমার বৃটিশ মিউজিয়মে পড়াশুনো করে তার জন্য অনেক তথ্য সংগ্রহ করে দিয়েছিলেন। খুব ঘটা করে ট্যাব্লোটি হয় এবং অনেক টাকা ওঠে। চিরপরিহাসপ্রিয় সুকুমার তখন বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে তার একটা ‘প্যারডি’ করার কথা ভেবেছিলেন কিন্তু কাজের ভিড়ে তা হয়ে ওঠে নি।

 লণ্ডন ও ম্যাঞ্চেস্টারে তিনি ব্রাহ্মসমাজে যেতেন ও মাঘোৎসবে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁর চিঠিতে সমাজে রবীন্দ্রনাথের দেওয়া ‘কর্মযোগ’ বিষয়ে ভাষণের উল্লেখ করেছেন।

 ইংরেজদের মধ্যে যে-সব প্রধান প্রধান লোকের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় হয়েছিল তার মধ্যে ছাপাখানা ও আলোকচিত্র বিশেষজ্ঞ ছাড়াও ছিলেন শিল্পী হ্যাভেল ও রথেনস্টাইন, কবি ব্রিজেস ও ইয়েটস, কবি আর্নল্ড ও তাঁর স্ত্রী, ফক্স ট্র্যাংওয়েজ, সিলভাঁ লেভি, মিঃ পিয়ার্সন, 'Wisdom of the East’ সিরিজের সম্পাদক ক্র্যানমর বিং প্রভৃতি।

 লণ্ডনে ডাঃ পি. কে. রায়ের বাড়ির সমাবেশে তিনি তাঁর ‘রামায়ণ’ (লক্ষণের শক্তিশেল) আর ‘ভাবুকসভা’ পড়ে শুনিয়েছিলেন। তাছাড়া বিভিন্ন সমাবেশে তাঁর গানের খুব আদর হয়েছিল।

 মিঃ পিয়ার্সন তাঁর বাড়িতে বাংলা সাহিত্য সম্বন্ধে একটা প্রবন্ধ পড়তে ডাকলেন। সুকুমার অনেক খেটে, ইণ্ডিয়া অফিসের লাইব্রেরি থেকে বইটই ঘেঁটে, তৈরি করলেন—“The Spirit of Rabindranath” এবং তার সঙ্গে কবির কতকগুলি কবিতার অনুবাদ করলেন। অকুস্থলে গিয়ে দেখেন অনেক জ্ঞানীগুণী ব্যক্তির মধ্যে কবীন্দ্র স্বয়ং উপবিষ্ট। যাই হোক, রচনাটি পড়া ও প্রশংসিত হল এবং পরে সেটা Quest পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। মিঃ ক্র্যানমর বিং বইয়ের আকারে ছাপাবার উদ্দেশ্যে সুকুমারকে রবীন্দ্রনাথের আরো কবিতা অনুবাদের জন্য অনুরোধ করেন, সুকুমার স্বীকৃতিও দেন কিন্তু কাজের ভিড়ে অন্যান্য অনেক কিছুর মতো এটিও হয়ে ওঠে নি।

 বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে অনেক দ্রষ্টব্য জিনিস তিনি দেখেন। সাফ্রেজেট আন্দোলনের সঙ্গে পরিচিত হন। হ্যাম্পটন কোর্টে বেড়িয়ে আসেন, রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে থিয়েটরে গিয়ে হাসির নাটক ও His Majesty’s Theatre -এ Oliver

১২
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী