পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-প্রথম খণ্ড.djvu/১৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দিয়েছেন। হিংসুটি খানিকক্ষণ তার দিদির খাবারের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলল। মামা ব্যস্ত হয়ে বললেন, “কিরে, কি হল? জিভে কামড় লাগল নাকি?” হিংসুটির মুখে আর কথা নেই, সে কেবলই কাঁদছে। তখন তার মা এক ধমক দিয়ে বললেন, “কি হয়েছে বল না!” তখন হিংসুটি কাঁদতে কাঁদতে বলল, “দিদির ঐ রসমুণ্ডিটা আমারটার চাইতেও বড়।” তাই শুনে দিদি তাড়াতাড়ি নিজের রসমুণ্ডিটা তাকে দিয়ে দিল। অথচ হিংসুটি নিজে যা খাবার পেয়েছিল তার অর্ধেক সে খেতে পারল না—নষ্ট করে ফেলে দিল। দিদির জন্মদিনে দিদির জন্য নতুন জামা নতুন কাপড় আসলে হিংসুটি তাই নিয়ে চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় করে তোলে।

 একদিন হিংসুটি তার মায়ের আলমারি খুলে দেখে কি, লাল জামা গায়ে, লাল জুতা পায়ে, টুকটুকে রাঙা পুতুল বাক্সের মধ্যে শুয়ে আছে। হিংসুটি বলল, “দেখেছ! দিদি কি দুষ্টু! নিশ্চয় মামার কাছ থেকে পুতুল আদায় করেছে—আবার আমায় না দেখিয়ে মায়ের কাছে লুকিয়ে বাখা হয়েছে!” তখন তার ভয়ানক রাগ হ’ল। সে ভাবল, ‘আমি তো ছোট বোন, আমারই তো পুতুল পাওয়া উচিত। দিদি কেন মিছিমিছি পুতুল পাবে?’ এই ভেবে সে পুতুলটাকে উঠিয়ে নিল।

 কি সুন্দর পুতুল! কেমন মিট্‌মিটে চোখ, আর ফুটফুটে মুখ, কেমন কচি কচি হাত পা, আর টুক্‌টকে জামা কাপড়। যত সব ভালো ভালো জিনিস সব কিনা দিদি পাবে! হিংসুটির চোখ ফেটে জল এল। সে রেগে পুতুলটাকে আছড়িয়ে মাটিতে

ফেলে দিল। তাতেও তার রাগ গেল না; সে একটা ডাণ্ডা নিয়ে ধাঁই ধাঁই করে পুতুলটাকে মারতে লাগল। মারতে মারতে তার নাক মুখ হাত পা ভেঙে তার জামা কাপড় ছিঁড়ে—আবার তাকে বাক্সের মধ্যে ঠেসে সে রাগে গরগর করতে করতে চলে গেল।

 বিকেলবেলা মামা এসে তাকে ডাকতে লাগলেন আর বললেন, “তোর জন্য কি এনেছি দেখিস নি” শুনে হিংসুটি দৌড়ে এল, “কই মামা? কি এনেছ? দাও না।”

 মামা বললেন, “মার কাছে দেখ গিয়ে কেমন সুন্দর পুতুল এনেছি।” হিংসুটি উৎসাহে নাচতে লাগল, মাকে বলল, “কোথায় রেখেছ মা?” মা বললেন, “আলমারিতে

সু. স. র.—২৪
১৮৫