পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-প্রথম খণ্ড.djvu/২০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ভয়ানক চটে গেল। রোগা বলল, ‘মোটকা লোকের বুদ্ধি মোটা।’ মোটা বলল, ‘রোগা লোকের কিপটে মন’।”

 “মোটা বুদ্ধি মানে কি বোকা বুদ্ধি?”

 “হ্যাঁ। তারপর শোন—মোটা আর রোগা তখন খুব ঝগড়া করতে লাগলো। এ বলল, ‘রোগা মানুষ ভালো নয়’—ও বলল, ‘মোটা হলেই দুষ্টু হয়।’ তখন তারা বলল, ‘আচ্ছা চল তো পণ্ডিতের কাছে—বইয়েতে কি লেখা আছে—জিজ্ঞাসা কর তো’।”

 “বইয়েতে কি সব লেখা থাকে?”

 “হ্যাঁ, থাকে। তারা তখন দুজনেই পণ্ডিতের কাছে গিয়ে নালিশ করলো। পণ্ডিতমশাই নাকের আগায় চশমা এঁটে, কানের ফাঁকে কলম গুঁজে, মুণ্ডু নেড়ে, টিকি ঝেড়ে তেড়ে বললেন, ‘রোসো! দাঁড়াও, একটু বোসো—রোগা এবং মোটা এদের কে কিরকম পাজি, বিচার করব আজই।’ এই বলে পণ্ডিতমশাই তাকিয়ার ওপর পাশ ফিরে নাক ডাকিয়ে ঘুমুতে লাগলেন। রোগা কানাই আর মোটা বিশ্ববভর বসেই আছে, বসেই আছে—এক ঘণ্টা যায়, দু ঘণ্টা যায়! তখন পণ্ডিতমশাই চোখ রগড়ে বললেন, ব্যাপারখানা কি? বাবুরা বলল, আজ্ঞে, সেই রোগা আর মোটার কথা। পণ্ডিত বললেন, ‘ঠিক ঠিক—এই বলে প্রকাণ্ড একখানা বই নিয়ে মুখ বেঁকিয়ে হেলেদুলে, ষাঁড়ের মতন সুরটি করে তিনি বলতে লাগলেন বইয়ে আছে—

মোটকা মানুষ হোঁৎকা মুখ,
বুদ্ধি ভোঁতা আহাম্মুক—’

অমনি রোগা কানাই হো হো করে হেসে উঠলো। তখন পণ্ডিত বললেন—

‘শুকনো লোকের শয়তানি,
দেমাক দেখে হার মানি।’

তাই শুনে মোটাবাব হেসে লুটোপুটি। তখন পণ্ডিত বললেন, ‘বইয়ে লিখেছে—

মস্ত মোটা মানুষ যত
আস্ত কোলা ব্যাঙের মতো
নিষ্কর্মা সব হদ্দ কুঁড়ে
কুমড়ো গড়ায় রাস্তা জড়ে!
—আর—
চিমসে রোগা যত ব্যাটা
বিষম ফাজিল, বেদম জ্যাঠা
শুঁটকো লোকের কারসাজি,
হিংসুটে আর হাড় পাজি॥’

তাই শুনে রোগা মোটা দুয়ে মিলে ভয়ানক রকম চটে গেল। পণ্ডিত বললেন—

‘দুটোই বাঁদর, দুটোই গাধা,
রোগা মোটা সমান হাঁদা।
ভণ্ড বেড়াল, পালের ধাড়ি,
লাগাও মুখে ঝাঁটার বাড়ি।
মাথায় মাথায় ঠুকে ঠুকে
চুনকালি দাও দুটোর মুখে॥’

১৯৬
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী