সাহেব পর্যন্ত হেসে গড়াগড়ি—তোমরা এ-সব বুঝবে কি?” তখন আমাদের মধ্যে একজন বলিয়া উঠিল, “সে কি বড়বাবু? আমরা হাসতে জানি নে? বলেন কি! আপনার গল্প শুনে কতবার কত হেসেছি, ভেবে দেখুন তো। আজকাল আপনার গল্পগুলো তেমন খোলে না—তা হাসবো কোত্থেকে? এই তো, বিশুদা যখন গল্প বলে তখন কি আমরা হাসি নে? কি বলেন?”
বড়বাবু হাসিয়া বলিলেন, “বিশু? ও আবার গল্প জানে নাকি? আরে, একসঙ্গে দুটো কথা বলতে ওর মুখে আটকায়, ও আবার গল্প বলবে কি?” বিশু বলিল, “বিলক্ষণ! আমার গল্প শোনেন নি বুঝি?” আমরা সকলে উৎসাহ করিয়া বলিলাম—“হ্যাঁ, হ্যাঁ, একটা শুনিয়ে দাও তো।” বিশু তখন গম্ভীর হইয়া বলিল, “এক ছিল রাজা—” শুনিয়া আমাদের চার-পাঁচজন হো হো করিয়া হাসিয়া বলিল, “আরে কি মজা রে, কি মজা! এক ছিল রাজা! হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ।”
বিশু বলিল, “রাজার তিন ছেলে—”
শুনিবামাত্র আমরা একসঙ্গে প্রাণপণে এমন সশব্দে হাসিয়া উঠিলাম যে বিশু নিজেই চমকাইয়া উঠিল। সকলে হাসিতে হাসিতে এ উহার গায়ে গড়াইয়া পড়িতে লাগিলাম—কেহ বলিল, “দোহাই বিশুদা, আর হাসিও না”—কেহ বলিল, “বিশুবাবু, রক্ষে করুন, ঢের হয়েছে।” কেহ কেহ এমন ভাব দেখাইল, যেন হাসিতে হাসিতে তাহাদের পেটে খিল ধরিয়া গিয়াছে।
বড়বাবু কিন্তু বিষম চটিয়া গেলেন। তিনি বলিলেন, “এ-সব ঐ বিশুর কারসাজি। ঐ আগে থেকে সব শিখিয়ে এনেছে। নইলে, ও যা বললে তাতে হাসবার মতো কি আছে বাপু?” এই বলিয়া তিনি রাগে গজগজ করিতে করিতে উঠিয়া গেলেন।
সেই সময় হইতে বড়বাবুর গল্প বলার সখটা বেশ একটা কমিয়াছে। এখন আর তিনি যখন তখন কথায় কথায় হাসির গল্প ফাঁদিয়া বসেন না।
(১)
দুই বন্ধু ছিল। একজন অন্ধ আরেকজন বদ্ধ কালা। দুইজনে বেজায় ভাব। কালা বিজ্ঞাপনে পড়িল আর অন্ধ লোকমুখে শুনিল, কোথায় যেন যাত্রা হইবে, সেখানে সঙেরা নাচগান করিবে। কালা বলিল, “অন্ধ ভাই, চল, যাত্রায় গিয়া নাচ দেখি।” অন্ধ হাত নাড়িয়া, গলা খেলাইয়া কালাকে বুঝাইয়া দিল, “কালা ভাই, চল, যাত্রায় নাচগান শুনিয়া আসি।”