পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-প্রথম খণ্ড.djvu/৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সুকুমার রায়

 এটি জীবনচরিত নয়, অসামান্য প্রতিভাবান মানুষের চরিত্রের কিছু ঘটনার ধারাসমাবেশ আর যে দুটি উপাদানে মানুষ গড়ে ওঠে—বংশগতি ও পরিবেশ এখানে সেই দুটির সূত্রানুসন্ধান৷

 গবেষণার পথে বিস্তারিত জীবনচরিত রচিত হতে পারে, সুকুমার রায়েরও হবে। অনেক বইপত্র ঘেঁটে, অনেক কাগজপত্র সংগ্রহ করে, অনেক বিশ্লেষণ হবে, কিন্তু ঘনিষ্ঠতার স্তিমিত প্রদীপে একান্ত আপন কথা বলা হয়তো হবে না। এখানে সেই ধরনের স্মৃতি নিবন্ধ হয়েছে৷

 পিতৃপুরুষ: মৈমনসিংহ জেলায় আমকাঁঠালের বনে ঘেরা, ছায়ায় ঢাকা, মসুয়াগ্রাম। ব্রহ্মপুত্রের কোলে নদীপিতৃকা সুজলা, সুফলা শ্যামা মাতৃভূমি। সেই দেশে বাস করতেন এক তেজস্বী কায়স্থ পরিবার। প্রায় প্রত্যেকটি মানুষ শক্তিশালী, দীর্ঘদেহী, গৌরবর্ণ ও নানা গুণান্বিত৷

 রামসুন্দর দেও বলে এক যুবক নদীয়া জেলার চাকদহ গ্রাম থেকে পূর্ব বাংলায় সেরপুরে এসেছিলেন। সেরপুরের জমিদার বাড়িতে যশোদলের রাজা গুণীচন্দ্র তাঁর সুন্দর চেহারা আর তীক্ষ্ন বুদ্ধি দেখে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে যশোদলে এনে, জামাই করে, জমিজমা, ঘরবাড়ি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করলেন। তাঁর বংশধরেরা সেখান থেকে সরে গিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদীর ধারে মসুয়াগ্রামে স্থায়ী বসবাস করেন৷

 সুকুমার রায়ের প্রপিতামহ লোকনাথ রায় রূপে, গুণে, পাণ্ডিত্যে, প্রতিভায় খ্যাত এবং জমিদারি জরিপের কাজে নিপুণ ছিলেন। বাবার উপরোধে তিনি বৃটিশ কোম্পানির অধীনে কয়েকটি জমিদারির সীমানানির্ধারণের কাজ নিয়েছিলেন কিন্তু কোনো-এক পক্ষ তাঁকে ঘুষ দিতে চাওয়ায় সেই চাকরি ছেড়ে দিলেন৷

 আগে থেকেই তিনি তন্ত্রসাধনা করতেন, এবার সেই সাধনাতেই ডুবে গেলেন। ছেলের মতিগতি ভালো নয় ভেবে তাঁর বাবা রামকান্ত কৃষ্ণমণি বলে একটি সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে তাঁর বিয়ে দিলেন। তবু ছেলের মন সংসারে ফিরলো না। বাবা তখন ছেলের সাধনার ডামরগ্রন্থ, নরকপাল আর মহাশঙ্খের মালা ব্রহ্মপুত্রের জলে ফেলে দিলেন।

 এই আঘাতে লোকনাথ শয্যাশায়ী হলেন এবং তিনদিনের দিন, বত্রিশ বছর বয়সে, ইচ্ছামত্যু বরণ করলেন। তখন কৃষ্ণমণির কোলে একটিমাত্র শিশুপুত্র৷

 বংশগতি: লোকনাথের ছেলে কালীনাথ সংস্কৃত, আরবি ও ফারসি ভাষায়