বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-প্রথম খণ্ড.djvu/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

করে, সে পকেটভরা টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরল। এদিকে রাজা-উজির পাত্র-মিত্র সভায় বসে—পিটার আসে না, আসে না—এলই না— রাজামশাই বাইরে খুব হাসলেন— বললেন, “ছেলেটা বেজায় চালাক”—কিন্তু মনে মনে ভারি চটলেন। একদিন পিটার দেখতে পেল মাঠের উপর দিয়ে জমকালো পোশাক পরে ঘোড়ায় চড়ে তলোয়ার হাতে কে যেন আসছে। পিটার বলল, “এই মাটি করেছে! রাজা আসছে।” পিটার দৌড়ে তার বোনকে বলল—“ভাতের হাঁড়িটা উনুনে চড়িয়ে দাও—ফুট্‌তে থাকুক।” এই বলে সে একখানা ভাঙা শিলের উপর হিজিবিজি কি-সব লিখতে বসল। তারপর যেই রাজামশাই তার বাড়ির সামনে এসেছেন, অমনি সে ফুটন্ত ভাতের হাঁড়িটাকে সেই শিলের উপর বসিয়ে বিড়্‌ বিড়্‌ করে কি-সব বলতে বলতে ভাতটাকে কাঠি দিয়ে নাড়তে লাগল। রাজামশাই বললেন, “এ আবার কি?” পিটার বলল, “আজ্ঞে ভাত রাঁধছি।” রাজা বললেন, “সে কি রে? তোর আগুন কই?” পিটার জোড়হাতে বলল, “মহারাজ, আমরা গরিব মানুষ, আগুন-টাগুন কোথায় পাব? সন্ন্যাসী ঠাকুর এই পাথরখানা দিয়েছেন, আর দুটো মন্ত্র শিখিয়ে দিয়েছেন, তাতেই আমাদের রান্না চলে যায়।”

 রাজা বললেন, “দে, ওটা আমায় দে—তোকে আমি মাপ করে দিচ্ছি।” পিটার কাঁদতে লাগল, দেখাদেখি তার দুষ্টু বোনটাও কাঁদতে লাগল। রাজা বললেন, “অত কান্নাকাটির দরকার কি? আমি তো কেড়ে নিচ্ছি না, দাম দিয়ে নিচ্ছি। এই নে!” বলে তিনি একমুঠো মোহর ফেলে দিলেন। তখন পিটার তাঁকে একটা যা-তা মন্ত্র শিখিয়ে দিল।

 রাজামশাই সেই শিলখানা নিয়ে বাড়ি গেলেন। গিয়ে সকলকে বলে পাঠালেন, “কাল সকালে তোমাদের এক আশ্চর্য ভোজ খাওয়াব।” সকাল না হতেই মন্ত্রী উজির কোটাল সকলে আশ্চর্য ভোজ খাবার জন্য রাজবাড়িতে হাজির। রাজামশাই সেই পাথরটিকে ঘরের মধ্যে বসিয়ে তার উপর প্রকাণ্ড হাঁড়ি চাপালেন, আর পোলাওয়ের চাল, ঘি, মাংস, মসলা সব তার মধ্যে দিয়ে গম্ভীরভাবে মন্ত্র পড়তে লাগলেন। পাঁচ মিনিট গেল, দশ মিনিট গেল, ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে গেল, পোলাও আর হল না। সকলে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে লাগল। রাজামশাই রেগে ঘেমে লাল হয়ে উঠলেন। শেষটায় তিনি লাফিয়ে উঠে কাউকে কিছু না বলে এক তলোয়ার হাতে আবার ঘোড়ায় চড়ে পিটারের বাড়ি ছুটলেন। মনে মনে বললেন, ‘এবারে আর পাজি পিটারকে আস্ত রাখছি নে।’

 দূর থেকে রাজাকে দেখেই পিটার এক দৌড়ে শোবার ঘরে গিয়ে লেপমুড়ি দিয়ে শুয়ে রইল। তার বোনকে সে আগে থেকেই সব শিখিয়ে রেখেছিল-সে করল কি একটা খরগোস কেটে তার রক্ত দিয়ে একটা থলি ভরে সেই থলিটা বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখল।

 রাজা ঘরে ঢুকেই জিজ্ঞাসা করলেন, “পিটার কই? তাকে শিগ্‌গির ডাক।” পিটারের বোন বলল, “দোহাই মহারাজ, পিটার এখন ঘুমুচ্ছে—সে ভয়ানক রাগী লোক, এখন জাগাতে গেলে আমায় মারবে।” রাজা বললেন, “কিছু ভয় নেই—আমি আছি।”

 পিটারের বোন পিটারকে ডাকতে গেল। খানিক বাদেই একটা চিৎকার গর্জনের মত শোনা গেল, রাজা দৌড়ে গিয়েই দেখেন পিটার একটা ছুরি নিয়ে তার

সু. স. র.—১০
৭৩