পাতা:সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা.pdf/১৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

শ্রেষ্ঠ কবিতা
১৩৩

ঝুরু-ঝুরু হাওয়া বয়, খাওয়া হ’ল প্রচুরই,
মোটা মোটা রোটা আর মুচ্‌মুচে কচুরি।
মাঝে মাঝে মোচে তার তা-ও দেয় দু’হাতে,
ভাং খেয়ে, মনে তার রং ধরে উহাতে।
হারুর বাড়িতে নেই, চ’লে গেছে তাহারা,
ঘুঘুরাম একা তাই দেয় বাড়ি পাহারা।
সহসা ঘুমেতে তার চোখ এল জড়িয়ে,
নাক ডাকে খাটিয়াতে দেহখানা ছড়িয়ে।
নাক ডাকে ঘুঘুরাম, বাঘ ডাকে যেন রে,—
ঘর-দোর কেঁপে ওঠে মনে হয় হেন রে।
সহসা ঘুঘুর ঘুম ভাঙে রাত দু’পরে,
দেখে দুটো ভাঁটা চোখ দাওয়াটার উপরে।
কালো-সাদা দাগ গায়ে প’ড়ে গেল নজরে,—
‘বা-বা-বা-বা বাঘ’ বলে তোত্‌লায় সজোরে।
নিঝুম নিথর গ্রাম, কেউ নাই জাগিয়া;
ঠকাঠক্ কাঁপে ঘুঘু দাঁতে দাঁত লাগিয়া।
থাবা ঘসে বাঘা ব’সে তেজ তার ভারি যে—
গুঁড়ি মেরে কাছে আসে লেজ তার নাড়ি’ যে।
কাঁপা-গলা চাপা সুরে ঘুঘু বলে কাতরে—
“দো-দো-দো-দোহাই বাঘা, বনে ফিরে যা তো রে,—
আমি মা-মানুষ নই, আমি ঘুঘু পাখী তো,
পিঁজরায় বসে আমি ঘু-ঘু-ঘু-ঘু ডাকি তো—”
কে শোনে ঘুঘুর কথা, রক্ষা কি আছে রে?
গুটি গুটি আসে বাঘা খাটিয়ার কাছে রে।
ঘুঘু চায় মিটিমিটি, কোথা আর পালাবে,
আরো যদি কাছে আসে লাঠি তার চালাবে।
আরে একি, বাঘা দেখি ভর দিয়ে দু’পায়ে,
কাছে এসে অবশেষে নাচে নানা উপায়ে!