ধর্মীয় কু-শাসনের নিগড়ে বাঁধা, সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির ভাগ-বাঁটোয়ারা, গৃহযুদ্ধ ইত্যাদিতে অর্থনৈতিকভাবে চুড়ান্ত বিপর্যস্ত, ক্ষতবিক্ষত এই দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন, শিশুহত্যা, নারীহত্যা অতি সাধারণ ঘটনা। তালিবাণী অপশাসনে নারীদের অবস্থা কি মর্মান্তিক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ‘নারী স্বাধীনতা' শব্দটিই সেখানে অলীক কল্পনা মাত্ৰ!
সাউর রেভোলিউশন (৭৮ সালের ক্যু-দেতাকে এই নামে ডাকা হয়ে থাকে) ক্ষমতার হাতবদল ঘটায় বটে কিন্তু মৌলিক পরিবর্তন কিছুই হয়নি। উপরন্তু নয়া ঔপনিবেশিক শক্তি পরিচালিত পুতুল সরকার উত্তরোত্তর জনপ্রিয়তা হারাতে থাকে পরিশেষে যা রূপ নেয় রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে ফলতঃ নারী স্বাধীনতার প্রশ্নটা বরাবরের মতো অবহেলিতই থেকে গেছে যুদ্ধবিগ্রহ, অভ্যন্তরীণ বিবাদে শতদীর্ণ আফগানিস্তানে। সে দেশ রূপ নিয়েছে বধ্যভূমির। বিশেষত নারীদের ক্ষেত্রে। তবে বধ্যভূমিতেও গোলাপ ফোটে। শাসন নিপীড়নের প্রাবল্য উপেক্ষা করে প্রতিবাদের জন্ম হয় নিজস্ব নিয়মে জীবন নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে। করবেই। আর জীবন দিয়ে এই কথাটির প্রতিষ্ঠা দিয়ে যান আফগান নারীমুক্তি আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেত্রী মীনা কেশওয়ার কামাল।
মীনার জন্ম ১৯৫৬ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারী কাবুলে। স্কুলজীবন থেকে ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দেন। শুধু নারী অধিকারের দাবীতেই নয় অন্যান্য সমস্ত গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছিল তাঁর স্বচ্ছল পদচারণা। তিনি ছিলেন একধারে কবি, সমাজকর্মী ও মানবাধিকার আন্দোলনের একজন আপোষহীন সেনানী। মাত্র কুড়ি বছর বয়েসে কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন গড়ে তুলেছিলেন Revolutionary Association of the Women of Afghanistan (RAWA), অল্প কিছুকালের মধ্যে যা হয়ে উঠল দেশের সর্বাগ্রগণ্য প্রগতিশীল ধর্মনিরপেক্ষ সংগঠন। ১৯৮১ সাল থেকে প্রকাশিত হতে থাকে একটি দ্বিভাষিক পত্রিকা পায়াম-ই-জান যেখানে দেশীয় মৌলবাদ ও বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দালালদের বিরুদ্ধে মতাদর্শগত লড়াই চালান