পাতা:সে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 বলি, রাগ করবে না! দাদা, তোমার চেয়ে আমার কেরামতি যে বেশি তা নয়। কম ব’লেই সুবিধে। আমি হোলে বলতুম, তাসমানিয়াতে তাসখেলার নেমতন্ন ছিল, যাকে বলে, দেখা-বিন্‌তি। সেখানে কোজুমাচুকূ ছিলেন বাড়ির কর্ত্তা, আর গিন্নির নাম ছিল, শ্রীমতী হাঁচিয়েন্দানি কোরুংকুনা। তাঁদের বড় মেয়ের নাম পামকুনি দেবি, স্বহস্তে রেঁধেছিলেন কিণ্টিনাবুর মেরিউনাথু, তার গন্ধ যায় সাত পাড়া পেরিয়ে। গন্ধে শেয়ালগুলো পর্য্যন্ত দিনের বেলা হাঁক ছেড়ে ডাকতে আরম্ভ করে নির্ভয়ে, লোভে কি ক্ষোভে জানিনে; কাকগুলো জমির উপর ঠোঁট গুঁজে দিয়ে মরিয়া হয়ে পাখা ঝাপটায় তিনঘণ্টা ধরে। এ তো গেল তরকারী। আর জালা জালা ভর্ত্তি ছিল কাঙ্‌চুটোর সাঙ্‌চানি। সেদেশের পাকা পাকা আঁকসুটো ফলের ছোবড়া-চোঁয়ানো। এই সঙ্গে মিষ্টান্ন ছিল ইক্‌টিকুটির ভিক্‌টিমাই, ঝুড়িভর্ত্তি। প্রথমে ওদের পোষা হাতি এসে পা দিয়ে সেগুলো দ’লে দিল, তারপরে ওদের দেশের সব চেয়ে বড়ো জানোয়ার, মানুষে গোরুতে সিঙ্গিতে মিশোল তাকে ওরা বলে গাণ্ডিসাঙ্‌ড়ুং, তার কঁটাওয়ালা জিব দিয়ে চেটে চেটে কতকটা নরম করে আনলে। তারপরে, তিনশো লোকের পাতের সামনে দমাদম হামানদিস্তার শব্দ উঠতে লাগল। ওরা বলে, এই ভীষণ শব্দ শুনলেই ওদের জিবে জল আসে; দূর পাড়া থেকে শুনতে পেয়ে ভিখারি আসে দলে দলে। খেতে খেতে যাদের দাঁত ভেঙে যায় তারা সেই ভাঙা দাঁত দান ক’রে যায় বাড়ির কর্ত্তাকে। তিনি সেই ভাঙা দাঁত ব্যাঙ্কে পাঠিয়ে দেন জমা করে রাখতে, উইল করে দিয়ে যান ছেলেদের। যার তবিলে যত দাত তার তত নাম। অনেকে লুকিয়ে অন্যের সঞ্চিত দাঁত কিনে নিয়ে নিজের ব’লে চালিয়ে দেয়। এই নিয়ে বড়ো বড়ো মকদ্দমা হয়ে গেছে। হাজারদাঁতীরা পঞ্চাশদাঁতীর ঘরে মেয়ে দেয় না। একজন সামান্য পনেরো দাঁতী ওদের কেট্‌কু নাড়ু খেতে গিয়ে হঠাৎ দম আটকিয়ে মারা গেল, হাজারদাঁতীর পাড়ায় তাকে পোড়াবার লোক পাওয়াই গেল না।

৪৮