পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থে বর্জিত সূচনাংশ ৩ ॥ নববর্ষ বিশ্বপ্রকৃতি প্রতিদিনই নূতন, কিন্তু তাহাকে প্রত্যহ নূতন করিয়া অতুভব করিবার সামর্থ্য আমাদের নাই । আমাদের পরমায়ু অল্পই, কিন্তু আমরা বিশ্বের চেয়ে ও যেন প্রাচীন। একটা সেকালের দীঘি যেমন তাহার ভাঙাঘাটে ও শৈবালদলে গঙ্গার চেয়ে প্রাচীন, তেমনি যে জগতে তুদিন মাত্র জন্মিয়াছি, সেই চিরদিনের জগতের চেয়ে আমরা পুরাতন । প্রকৃতি একই মূল্য লইয়া কোটিবংসর প্রত্যহ তাহার প্রভাত রচনা করিয়া আসিতেছে, একই নক্ষত্রমণ্ডলী অসংখ্যযুগ ধরিয়া তাহার প্রতিরাত্রের সভাসজ্জা সম্পাদন করিতেছে, নূতনত্বের চেষ্টামাত্রকে সে অবজ্ঞা করে, এতই সে স্বভাব-নবীন। আর আমরা কয়েকটা দিনমাত্র যে জীবনকে বহন করি, সে তাহার প্রাত্যহিক কর্মে এবং চিন্তায় প্রত্যহই জরাজীর্ণ হইতে থাকে, সে নিজের প্রতিদিনের পুনরাবৃত্তিতে প্রত্যহই ভারাক্রান্ত হইয়া উঠে। নূতনত্বের জন্য আমাদিগকে ঘুরিয়া বেড়াইতে হয়, খুজিয়া বেড়াইতে হয়, কত উদ্যোগ-আয়োজন করিতে হয়— আমরা এতই অল্পদিনের মধ্যে এতই ভয়ানক পুরাতন হইয়া পড়ি— অামাদের স্পশে নবীনত্বের মধ্যে জরা সংক্রান্ত হয়। সেইজন্য প্রকৃতিতে বর্ষারম্ভের কোনো বিশেষ দিন না থাকিলেও, মানুষ একটা নববর্ষের দিন চায়। আমাদের এই অতিক্ষুদ্র জীবিতকালটুকুকে ও মানুষ একটানাভাবে বহন করিতে চায় না— জীবনটাকে যেন নূতন-নূতন পরিচ্ছেদে মাঝে-মাঝে নূতন করিয়া আরম্ভ করিলাম, এইরূপ কল্পনা করিতে ইচ্ছা হয় । পৃথিবী গতবৎসরের ১লা বৈশাখ হইতে এ বৎসরের ১লা বৈশাখে সূর্য-প্রদক্ষিণ করিয়া আসিল, ইহা তাহার পক্ষে কোনো সংবাদই নহে । এখানে তাহার কোনো ছেদ নাই। আমাদেরও জীবনে ১লা বৈশাখে