পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

& 8 স্বদেশ পারিতেন, তবে দায়ে পড়িয়া আমরা স্বদেশী সামগ্রীর মর্যাদা রক্ষা করিতে বাধ্য হইতাম, তাহা হইলে টাকার সাহায্যে জিনিস ক্রয়ের চর্চা বন্ধ হইয়া রুচির চর্চা হইত। তাহা হইলে ধনীগৃহে প্রবেশ করিয়া দোকানের পরিচয় পাইতাম না, গৃহস্থের নিজের শিল্পজ্ঞানের পরিচয় পাইতাম। ইহা আমাদের পক্ষে যথার্থ শিক্ষা, যথার্থ লাভের বিষয় হইত। এরূপ হইলে আমাদের অস্তরে বাহিরে, অামাদের স্থাপত্যে ভাস্কর্যে, আমাদের গৃহভিত্তিতে, আমাদের পণ্যবীথিকায় আমরা স্বদেশকে উপলব্ধি করিতাম । তুর্ভাগ্যক্রমে সকল দেশেরই ইতরসম্প্রদায় অশিক্ষিত। সাধারণ ইংরেজের শিল্পজ্ঞান নাই, সুতরাং তাহারা স্বদেশী সংস্কারের দ্বারা অন্ধ । তাহারা আমাদের কাছে তাহীদেরই অনুকরণ প্রত্যাশা করে। আমাদের বসিবার ঘরে তাহীদের দোকানের সামগ্রী দেখিলে তবেই অণরাম বোধ করে, তবেই মনে করে আমরা তাহাদেরই ফরমায়েশে তৈরি সভ্যপদার্থ হইয়া উঠিয়াছি ; তাহদেরই অশিক্ষিত রুচি-অনুসারে আমাদের দেশের প্রাচীন শিল্পসৌন্দর্য সুলভ ও ইতর অনুকরণকে পথ ছাড়িয়া দিতেছে। এ দেশের শিল্পীরা বিদেশী টাকার লোভে বিদেশী রীতির অদ্ভুত নকল করিতে প্রবৃত্ত হইয়া চোখের মাথা খাইতে বসিয়াছে। যেমন শিল্পে তেমনি সকল বিষয়েই । আমরা বিদেশী প্রণালীকেই একমাত্র প্রণালী বলিয়া বুঝিতেছি। কেবল বাহিরের সামগ্রীতে নহে, আমাদের মনে, এমন-কি, হৃদয়ে নকলের বিষবীজ প্রবেশ করিতেছে । দেশের পক্ষে এমন বিপদ আর হইতেই পারে না। এই মহাবিপদ হইতে উদ্ধারের জন্য একমাত্র দেশীয় রাজ্যের প্রতি আমরা তাকাইয়া অাছি । এ কথা আমরা বলি না যে, বিদেশী সামগ্রী আমরা গ্রহণ করিব না। গ্রহণ করিতেই হইবে, কিন্তু দেশীয় আধারে গ্রহণ করিব। পরের অস্ত্র কিনিতে নিজের হাতখানা কাটিয়া ফেলিব না। একলব্যের মতো ধমুর্বিদ্যার গুরুদক্ষিণস্বরূপ নিজের দক্ষিণহস্তের 4