পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : ১০২ বিধভাষণ কহিলেন, “সরলা—তুমি চলে, আর আমি কাঁদছি কেন জিজ্ঞাসা করছো ?" সরলার প্রেমময়ী মাত্তি অবলোকন করিয়া ডাক্তার বাব রমাল দিয়া চক্ষ মছিলেন । সরলা কহিলেন, "আমি যাচিছ সত্য, কিন্তু আমার সখ হয় নাই কে বলে ? পতির সেবা ও সন্তান পালন করা আমাদের প্রধান সুখ ; তা আমার হয়েছে। যেটক দুঃখ ছিল, তা কাল তুমি বাড়ী আসায় দরি হয়েছে । আমার ন্যায় সখী ক’জন হয়েছে ? - বিধভাষণ কহিলেন, “সরলা, তুমি আর ও-কথা বলো না, তা হ’লে আমার বুক ফেটে যাবে ।” সরলা বিধভষেণের হস্ত ধরিয়া কহিলেন, "শেষ কালে আমার এক অনুরোধ আছে । এই বলিয়া শ্যামার দিকে চাহিলেন । সরলার চক্ষ হইতে ঝর ঝর করিয়া জল বহিতে লাগিল। বাক্য নিঃসরণ হইল না ; শ্যামা উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিয়া উঠিল । ডাক্তার বাব থামাইবেন কি, তাহারও আর কথা কহিবার সামথ্য রহিল না । অবিশ্রান্ত কেবল রমাল দিয়া মুখ চক্ষু মুছিতে লাগিলেন । বিধভষেণের হস্ত সরলার হাতেই আছে । তিনি একট পরে কহিলেন, “অনুরোধ এই যে, শ্যামাকে কখন দাসী বলে মনে ক’রো না । চিরকাল তোমার যেন জ্ঞান থাকে যে, শ্যামা ভোমার আপন মেয়ে ।" সরলা আবার চাপ করিলেন । বিধভযেণ কহিলেন, “সরলা, শ্যামা শুধু আমার মেয়ে নয়। শ্যামা আমার মা । শ্যামা ছিল ব’লেই আমরা এখনও বে'চে আছি ।" শ্যামা গাহ হইতে চলিয়া গেল । ডাক্তার বাব অনেক চেষ্টা করিয়া চক্ষ মুছিয়া ঝিনকে করিয়া আর একটু ঔষধ সরলার কাছে লইয়া গিয়া কহিলেন, “এইটকে থাউন দেখি ?" সরলা কহিলেন, “আর কেন ? ঔষধে আর আমার দরকার কি ?” বিধভাষণ কহিলেন, “সরলা খাও । এখনও তোমার পীড়া তত শক্ত হয় নাই ।” সরলা কহিলেন, “আমার নিজের শরীরের ভাব আমি বুঝি । আমি এত দিন মরে যেতেম । কেবল তোমাকে দেখবো ব'লে জীবনটি বেরোয় নাই । একবার আমার গোপালকে ডেকে দাও।” বিধুভুষণ ডাক্তার বাবর দিকে চাহিলেন। ডাক্তার বাব কহিলেন, "এখন আর কি ? যা বলছেন, তাই করো " শ্যামা দৌড়িয়া গিয়া গোপালকে কোলে করিয়া আনিল । সরলার নিকট আনিয়া নামাইয়া দিতে গেল । সরলা কহিলেন, “না—না, অমনিই থাক " তখন গোপালের এক হাত ও শ্যামার এক হাত ধরিয়া কহিলেন, “গোপাল, তুমি সে দিন ষে দিবি করেছিলে, তা মনে আছে ত ? শ্যামা তোমার মা, তোমার যথার্থ মা ! দেখো, যেন তোমার দিবি মনে থাকে।” পরে শ্যামার দিকে চাহিয়া কহিলেন, “শ্যামা, তুমি আমার বিস্তর করেছ। আমার মা বাপও এমন করতেন