পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উনত্রিংশ পরিচ্ছেদ ১০৯ রাগ করিয়া গিয়াছিল, কিন্ত চারি বৎসরের পর সকলকে পাইয়া আর অশ্র: সংবরণ করিতে পারিল না । নীলকমল বাটী আসিয়া একটি ক্ষুদ্র নবাববিশেষ হইল । দশটার মধ্যে তাহার আহার না হইলে নয়। কৃষ্ণকমল ও রামকমল ভয়ে কিছ: বলিতে পারে না। চাকরে ভাই—যাহা করে, তাহাই শোভা পায় । আহারান্তে নীলকমল পাড়ায় গিয়া যাত্রা গান ও নানাবিধ গল্প করে । কিন্ত সখ কখন চিরস্থায়ী নহে। নীলকমলের সুখ দেখিতে দেখিতে অবসান হইল । এক দিবস নীলকমল গৌরহরি ঘোষের বাটীতে গিয়া বসিয়া নানাবিধ গল্প করিতেছে ; পলীস্থ সকলে একত্র হইয়া শুনিতেছে । ইতিমধ্যে একজন জিজ্ঞাসা করিল, নীলকমল, তুমি কি সাজতে ?” প্রশ্ন শনিয়া নীলকমলের চেহারা অপ্রতিভের ন্যায় হইল। তদশনে আর একজন ঐ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিল। নীলকমল এবার একট রাগত হইল। কিন্ত বাক্য দ্বারা সে রাগ প্রকাশ না কবিয়া কহিল, “পাঁচালির আবার সঙ, সাজা কি ?" প্রথম প্রশ্নকারী উত্তর করিল, “তুমি ত বরাবর পাঁচালির দলে ছিলে না ? আগে যখন যাত্রার দলে ছিলে, তখন কি সাজতে ?" নীলকমল এবার রাগ গোপন রাখতে পারিল না । চীৎকার করিয়া কহিল, “তোমাদের সে সব কথায় কাজ কি ? যত পাড়াগে"য়ে ভাত বৈ ত নয়।" নীলকমলকে রাগত দেখিয়া একজন কৌতুক করিয়া কহিল, “নীলকমল তামাক সাজিত ।" নীলকমল শুনিয়া একট হাসিল । ভাবিল, উৎপাত কাটিয়া গেল। কিন্ত: অবিলম্বেই অন্য একজন কহিল, “নীলকমল হনুমান সাজিত !" নীলকমল এই কথা শুনিয়া রাগতস্বরে জিজ্ঞাসা করিল, “কে তোকে বলে আমি হনুমান সাজতাম ?" এই বলিয়া নীলকমল তথা হইতে উঠিল । কিন্তু তাহাকে গমনোমুখ দেখিয়া আর চার পচি জন “হনমান হনুমন" করিয়া ডাকিতে লাগিল । নীলকমল রাগ করিয়া তাহাদের একজনকে ধরিয়া প্রহার করিতে গেল । অমনি আর সাত আট জন 'বাছা হনুমান, বাছা হনুমান" বলিয়া নীলকমলের কণাক হরে মধ্যসিঞ্চন করিতে লাগিল । নীলকমল যাহাকে প্রহার করিতে গিয়াছিল, তাহাকে ধরিতে পারিল না । সতরাং রাগত হইয়া বাটীর দিকে ফিরিল। অমনি দশ বার জন "বাছা হনুমান, বাছা হনমান" বলিতে বলিতে পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিল। নীলকমল যে-দিকে যায়, তাহারাও সেই দিকে চলিতে লাগিল । এবং যত, যায়, ততই তাহাদিগের সংখ্যা ক্ৰমাগতই বন্ধি পাইতে লাগিল । বিরক্ত হইয়া নীলকমল বাটী আসিল । বালকেরাও তাহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ বাটী আসিল এবং অনবরত নীলকমলের কণে অমত বর্ষণ করিতে লাগিল । নীলকমল এক এক বার রাগিয়া ক্ষিপ্তের ন্যায় হইতে আরম্ভ করিল। তদশনে৷