পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : ১৪০ ছেলেটি যেন কাত্তি কবিশেষ। লেখাপড়াতেও বিলক্ষণ চতর। ছেলেটির সঙ্গে স্বর্ণলতার বিবাহ দেবার জন্য হেমের ইচ্ছা ছিল । বাবতে পেরেছ ত । ইচ্ছা ছিল, কিন্তু এক্ষণে নাই বলে হয় ; কারণ, যার ইচছা ছিল, সে-ই এক্ষণে বসন্ত রোগে শয্যাগত । এখন তখন । যদি সে পাঠটির ঐশ্বযf্য থাকিত, তা হ’লে ত এত দিন বিবাহ হয়েই যেত। কিন্তু তা যেখানে হয় নাই, সেখানে আর না হবারই সম্ভব ।" হরিদাস আগ্রহ সহকারে জিজ্ঞাসিলেন, “কিসে টের পেলে-না-হবার সম্ভব আছে ?" শশাক কহিলেন, “এই জন্য বলি, যদি হেমের মত হয়, তা হলে তার পিতামহী এ কুমা করবে না । তার ইচছা টাকা। যে বরের টাকা বেশী, তাহারই সহিত বিবাহ দেবে । আর বোধ হয়, আমি একটা অনুরোধ করলেও রাখতে পারে । এখন তোমার ভরসা হেমের মত ; যদি হেম মরে, তা হ’লে নিশ্চয়ই আমি তোমার পত্রের সহিত বিবাহ দেওয়ায়ে দিতে পারবো।" হরিদাস কহিলেন, "কে কত দিন বাঁচে, তার ত থিরতা নাই। কত লোক আন্তজাল হ’তে ফিরে আসে । আমাদের কি এমন অদ্যটি হবে যে, যে—“ গর ঠাকর মহাশয় শিষ্যদিগের বড় হিতৈষী কি না, তিনি অবলীলাক্রমে হেমের মতার কামনা করিলেন । হরিদাসের মনে মনে যে ভাব, তাহা ত জানাই গিয়াছে, কিন্ত তথাপি প্রকাশে তিনি অমন দরহ কথাটি কহিতে পারিলেন না । শশাঙ্কশেখর ক্ষণকাল চপ করিয়া থাকিয়া পনরায় আরম্ভ করিলেন, “বা বললাম, তা যদি ঘটে, তবে ত কোন কথাই নাই ; কিন্তু তা না ঘটলেও আর এক উপায় আছে ; তাতে তুমি সম্মত আছ কি না ?” হরিদাস কহিলেন, “সকলে প্রাণে প্রাণে বজায় থেকে যদি কোন উপায়ে শুভ কম হতে পারে, আমার মতে তাই করা কত্তব্য । তাতে কিঞ্চিৎ কষ্ট, কি ব্যয় বেশী হ’লেও আমি কাতর হব না।” শশাঙ্ক কহিলেন, “হেমের পীড়া এক্ষণ সাংঘাতিক বলতে হবে । তিনি চারি দিবসের মধ্যে, কি হবে টের পাওয়া যাবে। যদি অধোগতি দেখা যায়, তবে ত কথাই নাই। সেইখানে বসে দুই চারি বিন্দ চোকের জল ফেলতে পারলেই কাজ হসিল হ’ল ; কিন্তু যদি ক্ৰমশঃ আরোগ্য দেখা যায়, তা হলে আমার মতে গোপনে বিবাহ দেওয়াই কত্তব্য ।" হরিদাস কহিলেন, "গোপনে বিবাহ কি প্রকারে সম্ভব হতে পারে ? বড়মানুষের মেয়ে, একে আনা আর বামী শামীকে আনা সমান নয় ত ? সে দিবস আমার এক প্রজার বিবাহ দিলাম। কন্যাটি তার বাপের সহিত শয়ে ছিল। নিতান্ত শৈশব, পাঁচ বৎসর বয়স । অনায়াসে দয়ার ভেঙ্গে তার বাপকে তিন চারি জনে ধরে রইল, মেয়েটিকে কিঞ্চিৎ মিষ্টান্ন ও গোটা দই পতল দিয়ে কাজ সমাধা ক'রে দেওয়া গেল। কিন্ত এ পথলে ত আর সেটি খাটবে না। পাত্রী কি প্রকারে হস্তগত করবে ?”